Thursday, 31 July 2025

চর্যাপদের সহজিয়া দর্শন কি?

 প্রশ্ন - ১২: চর্যাপদের সহজিয়া দর্শন কি?

উত্তর: বাংলা সাহিত্য ও দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ ও আদি নিদর্শন হলো চর্যাপদ বা চর্যাগীতি। চর্যাপদের পদগুলোর সাহিত্য মূল্য এবং সাহিত্যের অন্তরালে গূঢ় দার্শনিক তত্ত্বের গুরুত্ব অসামান্য। মূলত বৌদ্ধ সাধন-ভজন সম্পর্কিত নানা বিষয় চর্যাগীতির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন পণ্ডিতগণ। এগুলো বিভিন্ন সময়ে রচিত হলেও একত্রে সংকলন করা হয়েছে। সহজিয়া দর্শনের উৎস হিসেবে পরিগণিত হয়।

চর্যাপদের সহজিয়া দর্শন : বৌদ্ধ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অন্যতম একটি সম্প্রদায় হলো সহজযান সম্প্রদায়, যাদের মতবাদকে সহজিয়া মতবাদ বলা হয়ে থাকে। চর্যাপদের মাধ্যমে তারা তাদের ধর্ম সাধনার নিগূঢ় পদ্ধতি ও বাণীর সাংকেতিকভাবে প্রকাশ করেছেন যা দার্শনিক তত্ত্বে ভরপুর। চর্যাপদের মূল বিষয়বস্তু হলো: সহজযান সম্প্রদায়ের ধর্মের বা সহজিয়া ধর্মের মোক্ষ | লাভের সাধন পদ্ধতির বর্ণনা; উপায় এবং তাত্ত্বিকতার আলোচনা।

বৌদ্ধ সহজযান সম্প্রদায়ের সাধকগণ নিজেদের সহজিয়া বলে। পরিচয় দেন। তাদের রচিত দর্শনই সহজিয়া দর্শন। সহজিয়াদের সাধ্য ও সাধনা অন্যান্য বৌদ্ধ সম্প্রদায় অপেক্ষা সহজ। তারা মনে করে। প্রত্যেক সত্তারই একটি সহজ স্বরূপ আছে, যা সর্বাবস্থায় সহজ থাকে। এ সহজ স্বরূপকে উপলব্ধিতে এনে মহাসুখে বা পরমানন্দে থাকাই সহজিয়াদের মূল লক্ষ্য। এটিই সহজিয়াদের মোক্ষ বা নির্বাণের স্বরূপ। তারা যে সাধন পদ্ধতির কথা চর্যায় বিবৃত করেছেন তা ছিল সহজ-সরল। যেমন- ৩২নং চর্যায় বলা হয়েছে-

"উজুরে উজু ছাড়ি মা জাহুরে বঙ্গ।

 নিয়ড়ি বহি মা জাহুরে লঙ্গ." 

"এ পথ সোজা, সোজা পথ ছেড়ে বাঁকা পথে যেও না; বোধি নিকটই আছে, লঙ্কায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই।"

উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, চর্যাপদের দর্শনতত্ত্ব মানেই বৌদ্ধ সহজিয়া দর্শন। বৌদ্ধ সহজিয়া সাধন সম্প্রদায়ের ধর্মসাধনার নিগূঢ় পদ্ধতি ও বাণী সাংকেতিকভাবে বহন করে চর্যাপদ রচিত। নির্বাণ লাভের সহজ সরল পন্থা বর্ণিত হয়েছে চর্যার বিভিন্ন পদে।

অতীশ দীপঙ্করের দর্শন সম্পর্কে লিখ। অথবা, অতীশ দীপঙ্করের দর্শন সম্পর্কে কি জান? সংক্ষেপে লিখ।'

প্রশ্ন- ১১: অতীশ দীপঙ্করের দর্শন সম্পর্কে লিখ।

অথবা, অতীশ দীপঙ্করের দর্শন সম্পর্কে কি জান? সংক্ষেপে লিখ।'


উত্তর : হিন্দু যুগের শেষ অধ্যায়ের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরুষ শ্রেষ্ঠ বাঙালি দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক হলেন অতীশ দীপঙ্কর। তিব্বতি সূত্র অনুযায়ী অতীশ দীপঙ্কর বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার বজ্রযোগিনী গ্রামে ৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পারিবারিক নাম হলো চন্দ্র গর্ভ।

অতীশ দীপঙ্করের দর্শন: মাত্র উনিশ বছর বয়সে অতীশ দীপঙ্কর ওদন্তপুরী মহাবিহারের আচার্য শীলরক্ষিতের নিকট হতে শ্রমন লাভ করেন। আচার্য তাঁকে শ্রীজ্ঞান নামে নতুন নাম প্রদান করেন। মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে, তিনি মগধের ধর্মক্ষিতের নিকট গিয়ে বোধিসত্ত্বদের প্রতিপাদ্য বিষয়ে শিক্ষা নিতে শুরু করেন। এবং অতি অল্প সময়েই তিনি বোধিসত্ত্বদের প্রতিপাদ্য চর্যাধ্যান ইত্যাদি অনুশীলন করে সাধনার উচ্চশিখরে আরোহণ করেন। বোধি সত্ত্বের কঠোর ব্রতে দীক্ষিত দীপঙ্করের সাফল্য দেখে আচার্য ধর্মরক্ষিত তাঁকে ভিক্ষুধর্মের শ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেন। মগধের প্রখ্যাত বৌদ্ধপণ্ডিতগণের নিকট অতীশ দীপঙ্কর -অধিবিদ্যা জ্ঞান ও বস্তুর বিবর্তনবাদ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। ভিক্ষু ধর্মে দীক্ষিত হবার পর অতীশ দীপঙ্কর বিক্রমশীলা বিহারেই অবস্থান করেন। সেখানে অল্পদিনের মধ্যেই তিনি প্রতিরূপে খ্যাতিলাভ করেন। কিন্তু আজীবন জ্ঞানতৃষ্ণায় তৃষিত দীপঙ্করের জ্ঞানের স্পৃহা কিছুতেই নিবৃত্ত হলো না, বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগল। তিনি গুরু চন্দ্র কীর্তির অধীনে চার বছরকাল অতিবাহিত করে গৌতম বুদ্ধের বিশুদ্ধ শিক্ষার উপর সুগভীর পাণ্ডিত্য লাভ করেন। তিব্বত গমনের পূর্ব পর্যন্ত অতীশ দীপঙ্কর বিক্রম শীলের প্রধান আচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। এই বিহার থেকেই অতীশ দীপঙ্কর তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'বোধি পথ প্রদীপ' রচনা করেন। এই গ্রন্থ থেকেই তার সমস্ত তত্ত্বদর্শনের ইস্পিত পাওয়া যায়।

উপসংহার: পরিশেষ আমরা বলতে পারি যে, অতীশ দীপঙ্করের দর্শন ছিল মূলত ধর্মীয় জ্ঞান আহরণভিত্তিক। তিনি আজীবন ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন ও ধর্মসাধনায় নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তিতে তার অনেক সমালোচনা উপস্থাপিত হলেও বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারের যে চেষ্টা তিনি করেছেন তা তাঁকে চিরকাল অবিস্মরণীয় করে রাখবে।

অতীশ দীপঙ্করের দার্শনিক চিন্তাভাবনা ব্যাখ্যা কর।

প্রশ্ন - ১০: অতীশ দীপঙ্করের দার্শনিক চিন্তাভাবনা ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: প্রাচীন বাংলার সমাজ সংস্কৃতি ও মননচিন্তার বিবর্তনে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশুদ্ধ মহাযানী বৌদ্ধমতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী ও দার্শনিক হলেন অতীশ দীপঙ্কর (৯৮০-১০৫৩ খ্রি.)। বলা হয় দশম শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা আলোকদীপ্ত ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান এবং 'বাঙালি' বৌদ্ধ মহাচার্যদের মধ্যে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান শ্রেষ্ঠতম। আর সমগ্র ভারতবর্ষের পণ্ডিত ও দার্শনিকদের মধ্যে তিনি। উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হিসেবে নন্দিত হয়েছেন। তাঁর ধর্ম সাধনা কেন্দ্রীভূত ছিল মানব কল্যাণে। তাই মানবতাবাদী তত্ত্বই তাঁর দার্শনিক রচনার মুখ্য বিষয়রূপে প্রতিভাত হয়েছে। প্রত্যেককে বুদ্ধের সমগ্র শিক্ষা অনুশীলন করতে হবে এটাই তাঁর দর্শনের মূলমন্ত্র ছিল।

অতীশ দীপঙ্করের দার্শনিক চিন্তাভাবনা: অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধধর্মকে অবক্ষয় থেকে পুনরুদ্ধার করেন এবং এ ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলেন। তিনি মহাযান মতের - শূন্যতাবাদ, বিজ্ঞানবাদ, মানবতাবাদী মৈত্রীভাবের অখণ্ডতা তুলে ধরে বৌদ্ধধর্মকে কলুষমুক্ত করে এক নতুন ধর্ম ও দর্শন প্রচার করেন। বিক্রমশীলা বিহারে ভিক্ষুগণ তখন নানা প্রকার নৈতিক ও মানসিক শৈথিল্যে ভারগ্রস্ত ছিল। দীপঙ্কর তাঁর অসাধারণ ইচ্ছাশক্তি ও শাস্ত্রজ্ঞান দ্বারা এসব পদস্খলনিত ভিক্ষুদের নৈতিক শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হন। সেসময়কার বিক্রমশীলা বিহারের অধিনায়ক আচার্য রত্নাকর তিব্বতি দূত আচার্য বিনয়ধরের নিকট যে উক্তি করেন তা থেকে দীপঙ্করের মানসিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রকাশ পায়। তিনি বলেছিলেন- "অতীশ না থাকিলে ভারতবর্ষ অন্ধকার। বহু বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানের কুঞ্চিকা তাঁহারই হাতে। তাহার অনুপস্থিতি এসব প্রতিষ্ঠান শূন্য হইয়া যাইবে।”

সে সময় তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম ছিল আরো নাজুক অবস্থায়। চারদিকে দেখা গিয়েছিল ধর্মীয় অনাচার ও অনিয়ম। ধর্মীয় শাস্ত্রজ্ঞের অভাবে তিব্বতে বৌদ্ধধর্মের আদর্শ নিশ্চিহ্ন হতে বসেছিল। দীপঙ্কর তিব্বতে গমন করার পর সারা তিব্বতের প্রধান প্রধান শহর, গ্রাম এবং পীঠস্থান ভ্রমণ করে তিনি নিরলসভাবে ধর্মের প্রচার চালাতে থাকেন। তাঁর বিপুল পাণ্ডিত্য এবং অসাধারণ বাগ্মিতায় সেদেশের মানুষ মুগ্ধ হয়ে যায় এবং তাঁরা তাদের হারানো ধর্মীয় বিশ্বাস ফিরে পেতে থাকে।

অতীশ দীপঙ্কর নিজেও তান্ত্রিক দীক্ষায় দীক্ষিত হন। রাহুল গুপ্তের নিকট হতে এ দীক্ষা গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় 'গুহ্য জ্ঞানবজ্র' তান্ত্রিক তন্ত্রবিদ্যায় পারদর্শিতার কারণে তাঁর পক্ষে তন্ত্রের কঠোরতা ও সংযম সম্পর্কে জনগণকে সজাগ করা সম্ভবপর হয়েছিল। তবে ভিক্ষুরূপে বৌদ্ধসংঘে দীক্ষা গ্রহণের পর, তিব্বতি সূত্রে জানা যায়, শাক্যমুনি বুদ্ধের আদেশে দীপঙ্কর বজ্রযান ত্যাগ করে মহাসাংঘিক সম্প্রদায়ের ভিক্ষুরূপে উপসম্পদা গ্রহণ করেন। এ কারণেই তিনি 'দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান' নামে অধিক পরিচিত।

পূবেই বলা হয়েছে মহাযানী বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্রে আছে 'বোধিসত্ত্ব'র ধারণা। আর বোধিসত্ত্বের পর্যায়ে তিনি যেতে পারেন যিনি কুশলকর্ম ও সদাচার অনুষ্ঠান দ্বারা নিজের মুক্তিকে অগ্রাহ্য করে অন্যের মুক্তি তথা বিশ্বের কল্যাণ কামনায় আত্মোৎসর্গ করতে এবং অগণিত মানুষের দুঃখের বোঝা গ্রহণ করতে দৃঢ়সংকল্প। অতীশ দীপঙ্কর মহাযান মৃতের এই মৈত্রীভাবাপন্ন ও মানবতাবাদী দিকটিকে শীর্ষে স্থান দেন। সর্বপ্রকার সংযমের মাধ্যমে মানবতার এই শীর্ষবিন্দুতে পৌছানোই ছিল দীপঙ্করের লক্ষ্য। তাঁর বিশ্বাস এ পথে সফলতা পেলেই বৌদ্ধধর্ম তার স্বমহিমায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। তাঁর মতে, ধর্মীয় জীবনযাপনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো আত্মসংযম, ধৈর্যধারণ ও আত্মশুদ্ধি। 'সর্বজগতের সর্বপ্রাণীর সব দুঃখ দূর করার জন্য বুদ্ধ হবো' এরূপ সংকল্প এবং এ সংকল্প সাধনের জন্য যে প্রাণরূপ প্রয়াস সেটাই সাধককে 'বোধিসত্ত্ব' লাভ করতে সহায়ক হয়। মহাযানী বৌদ্ধমতের এটাই মূল লক্ষ্য। দীপঙ্কর সকল বিপত্তি অতিক্রম করে তাঁর অপ্রমেয় মৈত্রী বলে তিব্বতের বিপথগামী মানুষদের মন জয় করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ কামনাই অতীশের এই বাণীতে বৌদ্ধধর্ম ও দর্শনের মৈত্রী ও করুণার কথা ধ্বনিত হয়েছে। নীহাররঞ্জন রায় যথার্থই বলেছেন, "চরিত্রে, পাণ্ডিত্যে মনীষায় ও অধ্যাত্ম গরিমায় দীপঙ্কর সমসাময়িক বাংলার ও ভারতবর্ষের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। পূর্ব ভারত ও তিব্বতের মধ্যে যাঁহারা মিলনসেতু রচনা করিয়া গিয়াছেন, তাঁহাদের মধ্যে দীপঙ্করের নাম সর্বাগ্রে এবং সকলের পুরোভাগে স্মর্তব্য।"

সংক্ষেপে শান্তিদেব দর্শন সম্পর্কে আলোচনা কর।

প্রশ্ন- ৯ :সংক্ষেপে শান্তিদেব দর্শন সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তরা: বৌদ্ধ মহাযান ধারার দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক শান্দিদেব সঠিক জন্ম পরিচয় এবং মৃত্যুক্ষণ জানা যায়নি। জন শ্রুতি আছে যে, তিনি রাজপুত্র ছিলেন। তারাদেবীর অনুপ্রেরণায় তিনি রাজ্য পরিত্যাগ করেন বৌদ্ধ ভিক্ষুর জীবনবরণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে শিক্ষা সমুচ্চয়, বোধি, চর্যাবতার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।

শান্তিদেবের দর্শন: শান্তিদেব তার শিক্ষা সমুচ্চয় গ্রন্থে বৌদ্ধ মহাযান সম্প্রদায়ের মতবাদ সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন এবং বোধি চর্যাবতার গ্রন্থে তিনি আলোচনা করেছেন। বুদ্ধত্ববাদী ব্যক্তির জীবনাদর্শ।

জাগতিক বিষয়ভাবনা: শান্তিদেব তাঁর বিভিন্ন রচনায়। মহাযান বৌদ্ধ দর্শনের অসারতা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন এবং বলেছেন যে, সুখ-দুঃখ, অনুরাগ, বিরাগ, লাভ-ক্ষতি সবই অবাস্তব। তাই মানুষের দায়িত্ব হলো অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে পার্থিব জীবনের দুদর্শা হতে অব্যাহতি লাভের চেষ্টা করা।

মানবতাবাদী চিন্তা: শান্তিদেব রচিত বোধি চর্যাবতার মানবতার সাধনা বিষয়ে বাঙালির মানবতাবাদী চিন্তার বিকাশে ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এ গ্রন্থের প্রতি পরতে পরতে তিনি মানবতার জয়গান গেয়েছেন।

মৈত্রীর জয়গান : শান্তিদেব বলেছেন, পৃথিবীতে অশুভ বা অন্যায় অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে। এর শক্তি প্রবল। এই ভয়ঙ্কর অন্যায় শক্তিকে জয় করার ক্ষমতা কোন ব্যক্তির নেই। এক জয় করতে পারে কেবল মৈত্রী।

প্রজ্ঞা পারমিতা ব্যাখ্যা কর। অথবা, প্রজ্ঞা পারমিতা বলতে শান্তিদেব কী বুঝিয়েছেন?

প্রশ্ন- ৮: প্রজ্ঞা পারমিতা ব্যাখ্যা কর।

অথবা, প্রজ্ঞা পারমিতা বলতে শান্তিদেব কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর:

ভূমিকা : মানবতার পূর্ণ বিকাশে বৌদ্ধদর্শনে যে সাধনা বা অনুশীলন বা চর্চার কথা বলা হয়ে থাকে তার নাম ষটপারমিতা। পরিমিতা শব্দের অর্থ যা সর্বাপেক্ষা উৎকর্ষ প্রাপ্ত হয়েছে। পালি বৌদ্ধ শাস্ত্রে দশ পারমিতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মহাযান বৌদ্ধদর্শনে দশ পারমিতার স্থলে ছয় পারমিতার কথা বলা হয়েছে। এ ছয়টি পারমিতা মহাযান বৌদ্ধধর্ম দর্শনে ঘটপারমিতা নামে পরিচিত। এ ষটপারমিতার সর্বশেষ স্তর হলে। প্রজ্ঞা পারমিতা।

প্রজ্ঞা পারমিতা : ধ্যান ও প্রজ্ঞা- এ দুটির সম্মিলিত চর্চার মাধ্যমে নির্বাণ লাভ করা যেতে পারে। পূর্বোক্ত পঞ্চবিধ ষটপারমিতার শেষোক্তটি হলো ধ্যান পারমিতার অনুশীলন বা চর্চার দ্বারা সাধক জগতের সমস্ত রহস্য ও অজানা বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারে। সাধক যে কোন বিষয় প্রজ্ঞা পারমিতার চর্চা দ্বারা সত্য উদঘাটন ও অনুধাবন করতে পারে। সাধক দিব্য জ্ঞানলাভ করতে পারে প্রজ্ঞা পারমিতার মধ্য দিয়ে। সুতরাং সাধকের কাছে বুদ্ধত্ব ও ইহত্বের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

শান্তিদেব প্রজ্ঞা পারমিতা সম্পর্কে বলেন, পঞ্চ পারমিতার সাধনা দ্বারা ভক্তের মাঝে প্রজ্ঞার উদয় হয়। তবে দুঃখাদি বাসনা, পরোপকার মর্ষণ, ধর্মনিধ্যান, বীর্য ও ধ্যান এ পঞ্চবিধ পারমিতার সুনিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল অনুশীলন ছাড়া প্রজ্ঞা বা জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। এ পঞ্চ পারমিতার উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে প্রজ্ঞা পারমিতা অর্জন সম্ভব।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ষটপারমিতার সর্বশেষ স্তর হলো প্রজ্ঞা পারমিতা। পঞ্চ পারমিতার চর্চা বা অনুশীলনের মাধ্যমেই প্রজ্ঞা পারমিতার জ্ঞান অর্জন সম্ভব হয়। সুতরাং প্রজ্ঞা পারমিতা বৌদ্ধদর্শনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

শান্তিদেবের বোধিচর্যা সংক্ষেপে লিখ। অথবা, শান্তিদেবের যটপারমিতা বলতে কী বুঝিয়েছেন?

প্রশ্ন - ৭: শান্তিদেবের বোধিচর্যা সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, শান্তিদেবের যটপারমিতা বলতে কী বুঝিয়েছেন?


উত্তরা:

ভূমিকা: বাঙালি দর্শনের মধ্যে বৌদ্ধদর্শন একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শন। এ দর্শনের মধ্যে যে কয়জন বাঙালি বৌদ্ধ দার্শনিক প্রভাব বিস্তার করেছেন তাদের মধ্যে শান্তিদেব ছিলেন। অন্যতম। তিনি ছিলেন মহাযান সম্প্রদায়ের একজন ধর্মতত্ত্ববিদ ও দার্শনিক। তিনি যে সমস্ত গ্রন্থ রচনা করেছেন তার অধিকাংশই সংস্কৃত ভাষায় রচিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে 'শিক্ষা সমুচ্চয়' ও 'বোধিচর্যাবতার' প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ।

 শান্তিদেবের বোধিচর্যা বা ষটপারমিতা শান্তিদেবের মতে, মানবতার পূর্ণ বিকাশে বৌদ্ধদর্শনে যে সাধনা বা চর্চার কথা বলা হয়ে থাকে তার নাম ষটপারমিতা। পারমিতা শব্দের অর্থ যা পারে গিয়েছে অর্থাৎ যা সর্বাপেক্ষা উৎকর্ষ প্রাপ্ত হয়েছে। পালি বৌদ্ধ শাস্ত্রে দশ পারমিতার কথা বলা হয়েছে কিন্তু বৌদ্ধদর্শনে দশ পারমিতার স্থলে ছয় পারমিতার কথা বলা হয়েছে। এ ছয়াট পারমিতা মহাযান বৌদ্ধধর্ম দর্শনে ষটপারমিতা নামে পরিচিত। নিম্নে ঘটপারমিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. দান পারমিতা: মানুষ মাত্রই স্বার্থপর। স্বার্থপর ব্যতীত মানুষ পাওয়া খুবই কষ্টকর। মানুষ সবসময় অন্যের ভালোর কথা চিন্তা না করে নিজের ভালোর কথা চিন্তা করে। কিন্তু দান পারমিতার লক্ষ্য হলো সাধকের নিজের মধ্যে যা কিছু আছে তার বিনিময়ে কোন কিছুর আশা না করে তাপরের কল্যাণে বা মঙ্গলে তা বিলিয়ে দেয়া।

২. শীল পারমিতা: পৃথিবীতে সবসময় দ্বন্দ্ব সংঘাত লেগেই রয়েছে। এ দ্বন্দ্ব সংঘাত থেকে উত্তরের পথ বের করার চেষ্টা করতে হবে। বিশ্বের এ যাবতীয় দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও অশান্তির মূল কারণ হলো পঞ্চবিধ। এ পঞ্চবিধ পাপকার্য হলো- প্রাণী-হিংসা হতে বিরত, পরস্বাপহরণ হতে বিরত, ব্যভিচার হতে বিরত, মিথ্যা বলা হতে বিরত, মাদকদ্রব্য সেবন হতে বিরত।

৩. ক্ষান্তি পারমিতা: মানুষ ক্ষমতাশীল। ক্ষমার দৃষ্টিতে মানুষ সবকিছু দেখে থাকে। তাই ক্ষান্তি পারমিতার লক্ষ্য হলো ক্ষমাশীলতার অনুশীলন করা। মানব সমাজে একে অপরের প্রতি হিংসা, মারামারি, কাটাকাটি হতে বিরত থাকাই হলো ক্ষান্তি পারমিতা।

৪. বীর্য পারমিতা: মহাযান বৌদ্ধ দর্শনে কুশল-কর্মে উৎসাহকেই বলা হয় বীর্য। বীর্য পারমিতার লক্ষ্য হলো কুশল বা শুভ ও মঙ্গলের প্রতি উৎসাহ লাভ করা। বীর্যের প্রতিপক্ষ হচে আলস্য, কুৎসিত বিষয়ে আসক্তি, বিষাদ, নিজের প্রতি অবিশ্বাস।

৫. ধ্যান পারমিতা: বৌদ্ধদর্শনে বুদ্ধত্ব লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ধ্যান বা সাধনা করা। সাধক ধ্যানমগ্ন হয়ে সাধনা করে দিব্য জ্ঞানলাভ করতে পারে। জগতের জাগতিক বস্তুরাজি এবং সমস্ত কিছু তিনি এ জ্ঞান দ্বারা বুঝাতে পারেন। সাধক সবসময় নির্জন স্থানে ধ্যানমগ্ন হবেন এটিই খ্যান পারমিতার লক্ষ্য।

৬. প্রজ্ঞা পারমিতা : ধ্যান ও প্রজ্ঞা এ দুটির সম্মিলিত চর্চা দ্বারাই নির্বাণ লাভ করা যেতে পারে। পূর্বোক্ত পঞ্চবিধ ষটপারমিতার শেষোক্তটি হলো পারমিতার অনুশীলন বা চর্চার দ্বারা- সাধক জগতের সমস্ত রহস্য ও অজানা বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, শান্তিদেবের ষটপারমিতার সাধনা দ্বারা সম্যক জ্ঞানলাভ করা সম্ভব হয়। শান্তিদেবের ষটপারমিতাই হলো বৌদ্ধদর্শনে মানবতাবাদের নির্দেশক। একজন সাধক যদি ভার ছয়টি গুণ অর্জন করতে সমর্থ হয় তাহলেই সে সফলতা অর্জন করতে পারে।


শান্তিদেবের মানবতাবাদী মতের ব্যাখ্যা দাও। অথবা, শান্তিদেবের মানবতাবাদী দর্শন সংক্ষেপে লিখ।

 প্রশ্ন - ৬: শান্তিদেবের মানবতাবাদী মতের ব্যাখ্যা দাও।

অথবা, শান্তিদেবের মানবতাবাদী দর্শন সংক্ষেপে লিখ।


উত্তর:

ভূমিকা: প্রগতিশীল বৌদ্ধ দার্শনিক সম্প্রদায় হিসেবে মহাযান সম্প্রদায় অত্যন্ত উদারপন্থি ও মানবতাবাদী সম্প্রদায়। এ সম্প্রদায়ের দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক শান্তিদেব (আনুমানিক ৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৮১৬ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন বুদ্ধত্বকামী মানুষের আদর্শস্বরূপ। তিনি বলেন, সথ দুঃখ, অনুরাগ বিবাগ, লাভক্ষতি সবই অবাস্তব। তিনি তাঁর 'বোধিচর্যাবতার' গ্রন্থে মহাযান বৌদ্ধ দর্শনের অনুসরণে জাগতিক সবকিছুর অসারতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে মানবতাবাদী দর্শন আলোচনা করেছেন।

শান্তিদবের মানবতাবাদী দর্শন: শান্তিদেব রচিত 'বোধিচর্যাবতার' গ্রন্থটি মানবতার সাধনায় বাঙালির মানবতাবাদী দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষ কিভাবে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে ব্যাপারে যে কয়জন মনীষী আলোচনা করেছেন তাদের মধ্যে শান্তিদেবের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জাতি হিসেবে বাঙালি কতটা উদার ও মানবতাবাদী তার প্রকৃত প্রমাণ পাওয়া যায় শান্তিদেবের 'বোধিচর্যাবতার' গ্রন্থে। এ গ্রন্থ তৎকালীন সময়ে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিল। এ গ্রন্থে মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে। এ গ্রন্থটি খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দী থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে বিভিন্ন ভাষায় অর্থাৎ তিব্বতীয়, মঙ্গোলীয় ও চীনা এ তিনটি ভাষার অনূদিত হয়। আবার আধুনিক কালে ইংরেজি ও ফারসি ভাষায় এর অনুবাদ করা হয়েছে।

শান্তিদেবের 'বোধিচর্যাবতার' দার্শনিক গ্রন্থ হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত হয়। এর মূল কারণ হলো শান্তিদেবের দর্শনের মানবিক মূল্যবোধ। মানুষের জীবনে মানবতাবাদ শান্তিদেবের দর্শনেই ফুটে উঠেছে। তিনি তাঁর বিখ্যাত 'বোধিচর্যাবতার' গ্রন্থে বলেছেন, "পৃথিবীতে অশুভ বা অন্যায় অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে আছে, যার শক্তি প্রবল। বহু প্রকার শুভ প্রচেষ্টাও অবশ্য পৃথিবীতে রয়েছে। কিন্তু ঐ ভয়ংকর অন্যায়কে জয় করার ইচ্ছা কারো নেই। তাকে জয় করতে পারে মৈত্রী। পরলোক, মোক্ষ বা নির্বাণ তো দূরের কথা, এটি না থাকলে সংসারই যে অচল হয়ে যায়।" এ উক্তিটিতে মৈত্রীর পক্ষে শান্তিদেবের সমর্থন তাঁর মানবতাবাদী মনেরই পরিচয় বহন করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, শান্তিদেব ছিলেন একজন মানবতাবাদী দার্শনিক। সমাজের মানুষের মধ্যে অন্যায়, অবিচার, ভেদাভেদ কখনো তাঁর মানবতাবাদ স্বীকার করে না। শান্তিদেব মনে করেন, সমাজের মানুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল। একজনের দুঃখে অন্যজন এগিয়ে আসবে। একজনের সুখে অন্যজন সুখী হবে। এটিই বাস্তবতা বলে শান্তিদেব মনে করেন। সুতরাং তার মানবতাবাদী দর্শনের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।

Wednesday, 30 July 2025

যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদ সম্পর্কে শান্ত রক্ষিতের বক্তব্য ব্যাখ্যা কর। অথবা, যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদ সম্পর্কে শান্ত রক্ষিতের বক্তব্য ব্যাখ্যা কর।

প্রশ্ন - ৫: যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদ সম্পর্কে শান্ত রক্ষিতের বক্তব্য ব্যাখ্যা কর। 

অথবা, যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদ সম্পর্কে শান্ত রক্ষিতের বক্তব্য ব্যাখ্যা কর।

উত্তর :

ভূমিকা: খ্রিস্টের জন্মের অনেক আগেই বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্মের আগমন ঘটে। তবে সম্রাট অশোক (খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩-২৩২) এর রাজত্বকালে বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম বিস্তার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পাল আমলে বৌদ্ধধর্ম দর্শন সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করে। তাই বিশ্বে যে কয়জন মহান বৌদ্ধ দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে তাদের মধ্যে শান্তরক্ষিতের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি সুদূর তিব্বতে গিয়ে নিজের মতকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

শান্তরক্ষিতের দর্শনতত্ত্ব: শান্তরক্ষিত ছিলেন বৌদ্ধধর্ম ও দর্শনের একজন বড় পণ্ডিত। তাঁর দর্শন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় নি। তবে তিনি বিজ্ঞানবাদী ও যোগাচারবাদী হিসেবে অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠভাবে জীবনকে দেখার চেষ্টা করেছেন। তাঁর দর্শনের প্রধান যুক্তি ছিল কোন কিছু গ্রহণ করা বা বর্জন করা।

তিব্বতের রাজা ঠিস্রোং শান্তরক্ষিতের ভাষা বুঝতেন না। তাঁর ভাষা বুঝার জন্য তিনি তিনজন লোককে তার নিকট পাঠালেন। তারা শান্তরক্ষিতের ভাষা বুঝলেন না। অতঃপর তিনি কাশ্মীরি পণ্ডিত অনন্তকে তার নিকট পাঠালেন এবং রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন। গোই লোচাবা এ প্রসঙ্গে বলেন যে, রাজা মন্ত্রীদের আদেশ দিলেন বৌদ্ধধর্মের উপাধ্যায় বা' শান্তরক্ষিতকে রাজপ্রাসাদে আনা হোক। মন্ত্রীরা উপাধ্যায়ের নিকট গিয়ে রাজার কথা জানালেন। উত্তরে উপাধ্যায় বা শান্তরক্ষিত বললেন, যুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষানিরীক্ষা করে যেটা ভালো মনে হবে সেটাকে আমি গ্রহণ করব। আর অন্যটিকে বর্জন করব। শান্তরক্ষিত- তার এ যুক্তিবাদকে তিব্বতে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তিব্বতে প্রচলিত পোন ধর্মের অযৌক্তিক জাদু মন্ত্র, ভূত প্রেতবাদে বিশ্বাসীসহ নানা গুহ্য সাধন মতবাদের বিরোধিতার সম্মুখীন হন। তিনি তাঁর শিষ্য পদ্মসম্ভব ও কমলশীলের সাহায্যে এ বিরোধিতাকে অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

শান্তরক্ষিত নিজেকে একজন দার্শনিক ধর্মপ্রচারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ধর্মপ্রচারের পাশাপাশি বেশকিছু মূল্যবান দার্শনিক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে 'তত্ত্বসংগ্রহ' অত্যন্ত মূল্যবান একটি দার্শনিক গ্রন্থ। তাছাড়া অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলো অষ্ট তথাগত স্তোত্র, বজ্রধর সংগীত ভগবতস্তোত্র টীকা, তত্ত্ব সংগ্রহ কারিকা, হেবজ্র উদ্ভব কুরকুলাহ, পঞ্চ মহোপদেশ, তথাসিদ্ধিনাম প্রকরণ, বিভংগ পঞ্জিকা, মধ্যমক অলংকার, ভাদন্যায় ভিত্তি, দগুলেখা প্রভৃতি।

উপসংহার: শান্তরক্ষিত শুধু জ্ঞানী ব্যক্তি ও পণ্ডিতই ছিলেন না। তিনি জনসাধারণের বন্ধুও ছিলেন। তিনি তাঁর পাণ্ডিত্যকে জনগণের মাঝে বিলীন করার সফলতাও অর্জন করেছিলেন। তিনি তিব্বতের জনগণের মধ্যে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করতে পেরেছিলেন। বৌদ্ধধর্মে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাই বৌদ্ধধর্মে তার অবদানের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।




বাঙালির দর্শন কি প্রকৃত দর্শন? ব্যাখ্যা কর।

 প্রশ্ন - ৪: বাঙালির দর্শন কি প্রকৃত দর্শন? ব্যাখ্যা কর।


উত্তর :

ভূমিকা : 'দর্শন' শব্দের উৎপত্তি দৃশ্ ধাতু থেকে। দৃশ্ + অনট = দর্শন। তাই শাব্দিক অর্থে দর্শন বলতে কোন কিছু দেখাকে বুঝায়। কিন্তু দর্শন শাস্ত্রে দর্শন শব্দটিকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ অর্থে দর্শন বলতে তত্ত্বানুসন্ধান দ্বারা জ্ঞান লাভের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে বুঝায়। প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব একটি দর্শন রয়েছে, যেমন- গ্রিক দর্শন, ইউরোপীয় দর্শন, ভারতীয় দর্শন ও মুসলিম দর্শন। তেমনি বাঙালি জাতির প্রথিতযশা ব্যক্তিবর্গের বিভিন্ন দার্শনিক সমস্যা সম্পর্কে সুচিন্তিত মতামত নিয়ে যে দর্শন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বাঙালি দর্শন নামে সুবিদিত।

বাঙালি দর্শন কি প্রকৃতই দর্শন: অতি প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আধুনিককাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন তাত্ত্বিক চিন্তাধারার উল্লেখ ও অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বাঙালির দার্শনিক ঐতিহ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর মধ্যে প্রাক বৈদিক চিন্তাধারা, বেদ বিরোধী চিন্তাধারা, ইসলামি চিন্তাধারা, দেশজ মরমি চিন্তাধারা ও পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাধারা বিদ্যমান। এসব চিন্তাধারার মধ্যে প্রাক বৈদিক লোকায়ত দর্শন বা চার্বাক দর্শন এবং পাশ্চাত্যের অনুপ্রবিষ্ট ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাধারা ছাড়া অন্যান্য তাত্ত্বিক চিন্তাধারা পারলৌকিক চিন্তাধারাকে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে। এতে জীবন ও জগৎ বিষয়ক সমস্যাদির উত্তর খোঁজা হয়েছে।

এক বৈদিক চিন্তাধারা আবর্তিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট ধর্মকে কেন্দ্র করে। সুতরাং ঊনবিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ পাশ্চাত্য দর্শনের চিন্তাধারা এখানে না আসা পর্যন্ত বাঙালির দর্শন ছিল ধর্ম বিশ্বাসকেন্দ্রিক। সেজন্য এ দর্শনকে বিশুদ্ধ না বলে ধর্ম দর্শন বা ধর্ম প্রভাবিত দর্শনরূপে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

তবে বাংলাদেশে দার্শনিক আলোচনায় ধর্মের প্রাধান্য থাকার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। এ দেশ মানবজাতির চারটি প্রধান ধর্মের অর্থাৎ মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধধর্মের মিলনস্থল। বাংলাদেশে প্রাক বৈদিক ধর্মের সাথে উক্ত চারটি ধর্মেরই মিলন ঘটেছে এবং এগুলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও লাভ করেছে।

তবে উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে দার্শনিক চিন্তার ক্ষেত্রে এক নবদিগন্তের সূচনা হওয়ার ফলে অন্ধ কুসংস্কার ও শাস্ত্রের আনুগত্য থেকে মুক্তির প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে অনেকটা মুক্তচিন্তার অধিকারী হয়ে কয়েকজন চিন্তাবিদ দর্শন চর্চায় এগিয়ে আসেন।

এসব চিন্তাবিদদের মধ্যে স্যার ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, হরলাল হাওলাদার, কে. সি. ভট্টাচার্য ও হরিদাস ভট্টাচার্যের নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁরা সবাই ছিলেন ভাববাদী। এসব চিন্তাবিদদের ভাবধারা প্রখ্যাত দার্শনিক ড. জি. সি. দেবের লেখনীতেও ফুটে উঠে। তবে ড. জি. সি. দেব প্রচলিত অর্থে শুধু ভাববাদী ছিলেন না। তিনি ভাববাদ ও বস্তুবাদের মধ্যে একটা সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করে গেছেন। সেদিক থেকে তাঁর দর্শন হচ্ছে 'সমন্বয়ী ভাববাদ'। শুধু ভাববাদই নয়, এ দেশের দর্শন আলোচনায় বস্তুবাদও স্থান পেয়েছে। এক্ষেত্রে আরজ আলী মাতুব্বরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বাঙালি দর্শন শুরুতে জড়বাদী এবং বৈদিক যুগ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ধর্মভিত্তিক। কিন্তু এরপর পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবধারার সাথে সঙ্গতি রেখে ড. জি. সি. দেবসহ বহু দার্শনিক তাঁদের সুচিন্তিত মতামত দ্বারা বাঙালি দর্শনকে সমৃদ্ধ করেছেন। আর এখানেই বাঙালি দর্শনের যথার্থতা নিহিত।

দর্শনে লোকায়ত বা চার্বাক দর্শনের গুরুত্ব লিখ। অথবা, বাঙ্গালি দর্শনে লোকায়ত বা কাবার্ক দর্শনের গুরুত্ব কী?

প্রশ্ন - ৩: দর্শনে লোকায়ত বা চার্বাক দর্শনের গুরুত্ব লিখ।

অথবা, বাঙ্গালি দর্শনে লোকায়ত বা চাবার্ক দর্শনের গুরুত্ব কী?


উত্তর:

ভূমিকা : বাঙালি দর্শন তথা সমগ্র ভারতীয়

উপমহাদেশের দার্শনিক চিন্তা চেতনায় চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন একটি ব্যতিক্রমী চরিত্রের অধিকারী। ভারতীয় বিভিন্ন দার্শনিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একমাত্র চার্বাকই বিশুদ্ধ জড়বাদী দর্শন। চার্বাক দর্শন সম্পর্কে কোন প্রামাণিক গ্রন্থ পাওয়া না গেলেও এ দর্শন যে অতি প্রাচীন তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ, বেদ, রামায়ণ, মহাভারত মহাকাব্যে এবং প্রাচীন বৌদ্ধ সাহিত্যের নানা স্থানে। এই মতবাদের উল্লেখ পাওয়া যায়। বাঙালি দর্শনও অতি প্রাচীন বিধায় এ দর্শনে চার্বাক দর্শনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

বাঙালি দর্শনে লোকায়ত বা চার্বাক দর্শনের গুরুত্ব: হাজার বছরের ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু-অহিন্দু নির্বিশেষে সকল শ্রেণির বাঙ্গালী চিন্তাবিদদের দ্বারা যে দার্শনিক চিন্তাধারা গড়ে উঠেছে তাই বাঙ্গালী দর্শন। বাঙ্গালী দার্শনিক চিন্তাচেতনার সর্বস্তরে ভারতীয় সব ধরনের দার্শনিকদের সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। যদিও সুস্পষ্টভাবে কোন গ্রন্থে বাঙ্গালী চিন্তায় চার্বাকদের গুরুত্বের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না, তথাপি দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই বাঙ্গালীরা চার্বাকদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। সে দিকগুলো নিম্নরূপ:

আধ্যাত্মিকতার বিরোধিতা: বাঙ্গালী দর্শনে আধ্যাত্মিকতার চরম রূপ আবার এর চরম বিরোধিতা দেখা যায়। বিরোধিতার যে ধারা তা অনেকটাই পাওয়া গেছে চার্বাকদের কল্যাণে। যারা ভারতবর্ষকে আধ্যাত্মিকতার পীঠস্থান বলে মনে করেন, চার্বাক দর্শন তাদের মতের বিরুদ্ধে জ্বলন্ত বিদ্রোহস্বরূপ। চার্বাকরা মনে করতেন এ বিশ্বজগতে কোন আধ্যাত্মিক সত্তা নেই। আমাদের মাঝে আধ্যাত্মিক সত্তার যে ধারণা আছে তা আমাদের মধ্যে বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে আমাদের মতোই কারো দ্বারা। তারা তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য আমাদের মাঝে এসব ধারণা প্রোথিত করেছেন।

বস্তুবাদের জয়গান: আজকাল আমরা বাঙ্গালী দর্শনে বস্তুবাদের যে বিজয় পতাকা দেখতে পাই, ভারতের প্রাচীন চার্বাক দর্শন ছিল তার অগ্রদূত। এ কথা স্বীকার করতে কারো কোন বাধা নেই যে বাঙ্গালীর চিন্তা ও মননে, কর্ম ও সাধনায় যদিও অধ্যাত্মবাদ ছিল প্রায় অপ্রতিহত, তবুও এ সনাতন চিন্ত ায় চার্বাকরা এমন ধারণার সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন, যার ফলে বাঙ্গালীরা (কিছুসংখ্যক) চলে যায় প্রচলিত বিশ্বাস ও দর্শনের বিপরীত মেরুতে।

মানব সমীক্ষা: বাঙ্গালী দর্শনে মানব সমীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর আলোচনার ধারা সৃষ্টির ক্ষেত্রে চার্বাকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের উৎপত্তি ও তার জীবনাদর্শসহ সমগ্র মানব পরিস্থিতি চার্বাক দর্শনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। অন্যান্য অনেক সমস্যার মতো মানুষের উৎপত্তি বিষয়ক প্রকল্পটিও চার্বাক দর্শনে জড়বাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। চার্বাক দার্শনিকদের মতে ক্ষিতি, অপ, তেজঃ ও মরুৎ এই চারটি শাশ্বত জড়োপাদানের মাধ্যমেই মানুষের উৎপত্তি হয়েছে। চিরন্তন আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার বাঙ্গালী দার্শনিকদের একটি ধারা চার্বাকদের ন্যায় চিরন্তন আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। চার্বাকরা মনে করতেন, যতদিন দেহ আছে ততদিন চেতনা আছে। দেহাবসানের সঙ্গে সঙ্গে চেতনারও অবসান ঘটে। তাই আত্মা বা চেতনা দেহেরই ধর্ম। দেহের অনুপস্থিতিতে আত্মা বা চেতনার কল্পনাও করা যায় না। চার্বাকদের এ মতবাদই দেহাত্মবাদ নামে পরিচিত যা পরবর্তীতে বাঙ্গালী দর্শনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

মানব জীবনের পরম লক্ষ্য: চার্বাক দর্শনে সুখ অর্জনকেই মানবজীবনের পরম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তারা মনে করেন, সুখের অনুসন্ধান এবং তা অর্জনই মানবজীবনের নৈতিক আদর্শ। যে যত বেশি সুখ অর্জন করবে সে তত বেশি ভালো। অবশ্য এ কথা ঠিক যে, জগতে অব্যাহত সুখ অর্জন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। দুর্ভোগমুক্ত অবিমিশ্র সুখের অস্তিত্ব এ জগতে নেই। সুখ সম্পর্কিত চার্বাক এ চিন্তাও 'বাঙ্গালী দার্শনিক চিন্তায়। অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়েছে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, ভারতীয় দর্শনের অন্যতম প্রাচীন ধারা হিসেবে চার্বাক দর্শন এ উপমহাদেশের সব দার্শনিক চিন্তায়ই কোন না কোনভাবে প্রভাব ফেলেছে। বাঙ্গালী দর্শনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাঙালি কিছু দার্শনিক চিন্তাধারায় চার্বাকদের। কোন গুরুত্ব না থাকলেও এর এক বিরাট অংশ চার্বাকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল এবং এখনও আছে। তাই বাঙ্গালী দর্শনে চার্বাকদের গুরুত্ব যে অপরিসীম তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

Monday, 28 July 2025

সংক্ষেপে চার্বাক মত ব্যাখ্যা কর?

 

প্রশ্ন- ২ : সংক্ষেপে চার্বাক মত ব্যাখ্যা কর?


উত্তরা:

ভূমিকা: চার্বাক দর্শন ভারতীয় দর্শনের একটি উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রদায়। ভারতীয় দর্শনের ৬২টি সম্প্রদায়ের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম সম্প্রদায় হলো চার্বাক সম্প্রদায়। বেদের প্রতি অনীহা প্রকাশ করে তার পবিত্রতা খণ্ডনের মাধ্যমে চার্বাক দর্শন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এ দর্শনের কোন মূল গ্রন্থ পাওয়া না যাওয়ায় এ দর্শনের প্রতিষ্ঠা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠাতা যাই হোক না কেন চার্বাক দর্শন মূলত নাস্তিক দর্শন বা জড়বাদী দর্শনকে বুঝায়।

চার্বাক দর্শন: ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে চার্বাক দর্শনই একমাত্র বিশুদ্ধ জড়বাদী দর্শন। যে মতবাদ অনুসারে অচেতন জড়বাদী পদার্থই একমাত্র সত্তা এবং মন, প্রাণ, চৈতন্য প্রভৃতি জগতের সব বস্তুই জড় পদার্থ হতে উদ্ভূত সে মতবাদই জড়বাদ। জড়বাদীরা আত্মা এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না।

চার্বাক দর্শন সম্পর্কে কোন প্রামাণিক গ্রন্থ পাওয়া না গেলেও এটা যে অতি প্রাচীন দর্শন এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, মহাকাব্য এবং প্রাচীন বৌদ্ধ সাহিত্যের স্থানে স্থানে এ মতবাদের উল্লেখ পাওয়া যায়। তদুপরি ভারতের অন্যান্য দার্শনিক সম্প্রদায় চার্বাক মতবাদ খণ্ডন করার জন্য চার্বাক মতবাদের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা হতেও চার্বাক দর্শন ও তার প্রাচীনত্ব সম্পর্কে আমরা কিছু জানতে পারি। চার্বাক দর্শনের সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তীকালে দর্শনের ক্ষেত্রে স্বীকৃত না। হলেও জড়বাদ একটি বিশিষ্ট দার্শনিক মতবাদ বলে চার্বাক দর্শন ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করেছে।

চার্বাক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে এ নিয়ে দার্শনিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, প্রাচীন কালে চার্বাক নামে এক ঋষি ছিলেন। তিনি চার্বাক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। আবার কেউ। কেউ বলেছেন, 'চব' ধাতু থেকে চার্বাক শব্দটির উৎপত্তি। 'চর' ধাতুর অর্থ চর্বণ করা বা খাওয়া। এ দর্শন খাওয়াদাওয়াকে জীবনের পরম লক্ষ্য বলে মনে করে। তাই এ দর্শনের নাম চার্বাক।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় বিভিন্ন দার্শনিক সম্প্রদায়ের মধ্যে চার্বাক দর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ভারতীয় বিভিন্ন দার্শনিক সম্প্রদায় যেখানে বেদ এবং উপনিষদকে কেন্দ্র করে তাদের দর্শন চর্চা করেছেন সেখানে চার্বাক দর্শন বেদ ও উপনিষদকে অস্বীকার করে তাদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল হয়ে মুক্ত ও স্বাধীন চিন্তার মাধ্যমে দর্শন চর্চা করেছেন।



বাঙালির দর্শন কী? | অথবা,বাঙালির দর্শন কাকে বলে? | অথবা, বাঙালি দর্শনের সংজ্ঞা দাও|

প্রশ্ন ১) বাঙালির দর্শন কী?

অথবা,বাঙালির দর্শন কাকে বলে?

অথবা, বাঙালি দর্শনের সংজ্ঞা দাও।


উত্তরা :

ভূমিকা: বাঙালির দর্শন চিন্তার ইতিহাস সুপ্রাচীন।

অন্যান্য জাতি দ্বারা বাঙালি শাসিত হলেও নিজস্ব মনন সাধনার ব্যাপারে সে স্বতন্ত্র ছিল। বাঙালি দর্শনে অন্যান্য জাতির দর্শন চিন্তার প্রভাব লক্ষ করা যায়। ইতিহাসের প্রাথমিক যুগ থেকেই বাঙালি দর্শন ছিল সমৃদ্ধ। বিভিন্ন চিন্তাধারার সাথে নিজস্ব চিন্তার সমন্বয় ঘটিয়ে বাঙালি দর্শন চর্চা করেছে।

বাঙালি দর্শন: বাঙালি জাতীয় মনন সাধনার ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, অন্যান্য প্রাগ্রসর জাতির মতো বাঙালির দর্শন চিন্তা ও ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে বিকশিত হয়েছে। বাঙালি দর্শন বিকাশের প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগে জগৎ ও জীবনের স্বরূপ ও গূঢ়ার্থ আবিষ্কার এবং যথার্থ মানবোচিত জীবনের অনুসন্ধানসহ মানুষকে নিয়ে মানুষের ভাবনা বাঙালির দর্শন চিন্তায় একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যরূপে দেখা দিয়েছে। তাই বলা যায়, বাঙালি দর্শন হলো বাঙালির ধ্যানধারণা, চিন্তামনন, ভাবধারা, মতামত, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদির সংমিশ্রণ। বাঙালি দর্শন নিছক দুঃখবাদী কিংবা ভাববিলাসী দর্শন নয়; বাঙালি দর্শন হলো জগৎ ও জীবনের সাথে সম্পর্কিত দর্শন। তাই বলা যায়, বাংলা ও বাংলার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বৈচিত্র্যময় রূপ ও রসের মাধুর্যে আপ্লুত হয়ে মরমি চেতনায় উদ্বুদ্ধ যে দর্শন তাকেই বাঙালি দর্শন বলে অভিহিত করা হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা: বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্নভাবে বাঙালির দর্শনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো:

অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার রায় বলেন, "যে প্রজ্ঞাময় দর্শন বাংলাদেশের আবহমান কালের বিশাল পটভূমিতে, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এ পর্যন্ত বিবর্তিত হয়েছে তাই বাঙালির দর্শন।"


অধ্যাপক সাইদুর রহমান বলেন, "বাঙালির দর্শন কেবল সমদর্শন নয়, খালি পরলোক চর্চা নয়, তত্ত্ববিদ্যার নিছক রোমন্থন ও কসরত নয়, পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের যে কোন সার্থক দর্শনের ন্যায় বাঙালি দর্শনও মূলত জীবনদর্শন, উন্নত মানবজীবন প্রণয়ন ও যাপনের উপায়ানুসন্ধান।"


অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন আহমেদ এর মতে, “বাঙালি দর্শন মুক্তি বা মোক্ষ লাভকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।”


উপসংহার: উপরের আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি, বাঙালির দর্শন হলো বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতনা, মনন ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচিত জীবনদর্শন। বাঙালি দার্শনিক, পণ্ডিত, মুনিঋষীদের জ্ঞাতগর্ভ চিন্তার ফসল হলো বাঙালির দর্শন।



বাঙালির দর্শন প্রাচীন ও মধ্যযুগ 'খ' বিভাগের সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর (অনার্স তৃতীয় বর্ষ)| পরিক্ষার পূর্ণ প্রস্তুতি |



বাঙালির দর্শন: প্রাচীন ও মধ্যযুগ
(অনার্স তৃতীয় বর্ষ)
বিষয় কোড: 231709

খ-বিভাগ: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলি (Short Questions)


১.বাঙালির দর্শন কী? অথবা, বাঙালির দর্শন কাকে বলে?

২. সংক্ষেপে চার্বাক মত ব্যাখ্যা কর।

৩. দর্শনে লোকায়ত বা চার্বাক দর্শনের গুরুত্ব লিখ।

 অথবা, বাঙ্গালি দর্শনে লোকায়ত বা কাবার্ক দর্শনের গুরুত্ব কী?

৪. বাঙালির দর্শন কি প্রকৃত দর্শন? ব্যাখ্যা কর।

৫.যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদ সম্পর্কে শান্ত রক্ষিতের বক্তব্য ব্যাখ্যা কর। 

অথবা, যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদ সম্পর্কে শান্ত রক্ষিতের বক্তব্য ব্যাখ্যা কর।

৬.শান্তিদেবের মানবতাবাদী মতের ব্যাখ্যা দাও।

অথবা, শান্তিদেবের মানবতাবাদী দর্শন সংক্ষেপে লিখ।

৭. শান্তিদেবের বোধিচর্যা সংক্ষেপে লিখ। 

অথবা, শান্তিদেব যটপারমিতা বলতে কী বুঝিয়েছেন?

৮. প্রজ্ঞা পারমিতা ব্যাখ্যা কর।

অথবা, প্রজ্ঞা পারমিতা বলতে শান্তিদেব কী বুঝিয়েছেন?

৯.সংক্ষেপে শান্তিদেব দর্শন সম্পর্কে আলোচনা কর।

১০. অতীশ দীপঙ্করের দার্শনিক চিন্তাভাবনা ব্যাখ্যা কর।

১১. অতীশ দীপঙ্করের দর্শন সম্পর্কে লিখ।

অথবা, অতীশ দীপঙ্করের দর্শন সম্পর্কে কি জান? সংক্ষেপে লিখ।'

১২.চর্যাপদের সহজিয়া দর্শন কী? 

১৩.বাঙালি দর্শনে চর্যাপদ এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

 অথবা, ব্যঙালি দর্শনে চর্যাপদের গুরুত্ব লেখ।

১৪.জয়দেবের সমাজ দর্শন সংক্ষেপে আলোচনা কর। 

১৫. বৈষ্ণবীয় প্রেমতত্ত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।

১৬.গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন কী?

অথবা, গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন বলতে কী বুঝ?

১৭. সংক্ষেপে বৈষ্ণবদর্শনের উৎসসমূহ আলোচনা কর।

১৮. সুফি দর্শনের আত্মাতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, আত্মা সম্পর্কে সুফিবাদের ব্যাখ্যা তুলে ধর।

১৯. "এই মানুষে সেই মানুষ আছে" কে বলেছেন? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর। 

২০. বাউল দর্শনের প্রেমতত্ত্ব আলোচনা কর।

বাঙালির দর্শন প্রাচীন ও মধ্যযুগ 'ক' বিভাগের সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর (অনার্স তৃতীয় বর্ষ)| পরিক্ষার পূর্ণ প্রস্তুতি |


এখানে বিগত সালের প্রশ্ন সহ কিছু গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো। আশাকরি পরিক্ষায় এখান থেকে অধিকাংশ প্রশ্ন পাবেন।

বাঙালির দর্শন: প্রাচীন ও মধ্যযুগ
(অনার্স তৃতীয় বর্ষ)
বিষয় কোড: 231709

ক-বিভাগ :

১. বাঙালির দর্শন কি?

উত্তর: বিভিন্ন যুগে বাঙালির চিন্তা-চেতনা মননে জগৎ, জীবন, ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ ও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে যে দার্শনিক মতবাদ গড়ে উঠেছে তাই বাঙালির দর্শন।


২. বাঙালির দর্শন চর্চার সূচনা করেন কারা?

উত্তর: প্রাচীন বাঙালিরা অর্থাৎ অনার্যরা এদেশে দর্শন চর্চার সূত্রপাত করেন।


৩. বাঙালির দর্শনের সূচনা কোথা থেকে হয়?

উত্তর: প্রাচীন বাংলার লোকায়ত বা চার্বাক সম্প্রদায় হতে।


৪. 'বাঙালি' শব্দটির উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে?

উিত্তর: বঙ্গাল শব্দ হতে।


৫. বাঙালি দর্শনের দুটি অবৈদিক উপাদান লেখ।

উত্তর: বাঙালি দর্শনের দু'টি অবৈদিক উপাদান শাক্ত ও শৈব মত।


৬. বাঙালি দর্শনের প্রাচীন ও মধ্যযুগের সময়কাল লেখ।

উত্তর: খ্রিষ্টপূর্ব যুগ থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত (প্রাচীন কাল)। দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত (মধ্যযুগ)।


৭.বাঙালি দর্শন কি সমন্বয়ধর্মী?

উত্তর: হ্যাঁ বাঙালি দর্শন সমন্বয়ধমী।


৮. বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন কোনটি?

উত্তর: চর্যাপদ।


৯. চর্যাপদ কি?

উত্তর: বৌদ্ধ সহজিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মসাধনার নিগূঢ় পদ্ধতি ও বাণী সম্বলিত গীতি সংকলনকে চর্যাপদ বলে।


১০. চর্যাপদ কীসের সংকলন?

উত্তর:বৌদ্ধ মহাজিয়া গীতি সংকলন।


১১. চর্যাপদের পদকর্তা কতজন? 

উত্তর: চর্যাপদের পদকর্তা ২৪ জন।


১২. চর্যাপদ কোথায় পাওয়া গিয়েছিল?

উত্তর: মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদ পাওয়া গিয়েছিল।


১৩. বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের নাম লেখ।

উত্তর: ত্রিপিটক।


১৪. 'বৌদ্ধ' ধর্মগ্রন্থের নাম এবং প্রকারভেদ লিখ।

উত্তর: বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের নাম ত্রিপিটক এবং প্রকারভেদ : ১. বিনয় পিটক, ২. সুত্ত পিটক ও ৩. অভিধম্ম পিটক।


১৪. 'সকলই দুঃখময়'-কে বলেছেন?

 উত্তর: 'সকলই দুঃখময়' গৌতম বুদ্ধ বলেছেন।


১৬. বুদ্ধের চারটি আর্যসত্য লিখ।

উত্তর: চারটি আর্যসত্য হলো: (ক) দুঃখ আছে, (খ) দুঃখের কারণ আছে (গ) দুঃখের নিবৃত্তি আছে (ঘ) দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে।


১৭. 'বোধিচিত্ত কি?

উত্তর: তিনিই বোধিসত্ত্ব, যিনি কুশল কর্ম ও সদাচার অনুষ্ঠান দ্বারা পরম মুক্তি বা নির্বাণ প্রাপ্ত হয়ে অবলীলাক্রমে তা অগ্রাহ্য করে বিশ্বের কল্যাণ ও মুক্তি কামনায় আত্মোৎসর্গ করেছেন এবং জগতের দুঃখদাহের মধ্যে অগণিত মানুষের দুঃখের বোঝা গ্রহণ করতে দৃঢ়সংকল্প, পারমিতাসমূহ আচরণ করে উদয়নের পথে দশভূমি অতিক্রম করে যিনি বুদ্ধত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।


১৮. বাংলাদেশে বসবাসকারী বৌদ্ধদের মধ্যে প্রভাবশালী ধারা কোনটি?

উত্তর: বজ্রযান বা সহজযান।


১৯. সহজিয়া কী?

উত্তর: সহজিয়া একটি বিশেষ ধর্মসম্প্রদায় যারা

সহজপথে সাধনা করে।


২০. বৌদ্ধধর্মের প্রধান দুটি সম্প্রদায়ের নাম কী কী?

উত্তর: বৌদ্ধধর্মের প্রধান দুটি সম্প্রদায়ের নাম হলো: হীনযান সম্প্রদায় এবং মহাযান সম্প্রদায়।


২১. হীনযান কারা?

উত্তর: হীনযান একটি বৌদ্ধ সম্প্রদায় যারা মনে করে প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর নিজের মুক্তির জন্য চেষ্টা করবে, অন্যের মুক্তির কথা চিন্তা করা তার কাজ নয়।


২২. মহাযান কারা?

উত্তর: যারা নিজের মুক্তি কামনা না করে সর্বজীবের মুক্তি কামনা করে তারাই মহাযান।


২৩. শান্ত রক্ষিতকে তিব্বতীয়রা কী নামে ডাকত? উত্তর: শান্ত রক্ষিতকে তিব্বতীয়রা শিবাছো বা শান্তি জীব নামে ডাকত।


২৪. শান্তরক্ষিত কোন বৌদ্ধ বিহারের আচার্য ছিলেন?

উত্তর: শান্তরক্ষিত ছিলেন নালন্দা বৌদ্ধ বিহারের আচার্য।


২৫. শান্তরক্ষিত কে ছিলেন?

উত্তর: শান্তরক্ষিত ছিলেন নালন্দা বিহারের আচার্য, বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শন প্রচারক।


২৬. শীলভদ্র কে?

উত্তর: শীলভদ্র ছিলেন একজন বৌদ্ধ দার্শনিক।


২৭. শীলভদ্র কোন মহাবিহারের আচার্য ছিলেন?

উত্তর: শ্রীলভদ্র নালন্দা মহাবিহারের আচার্য ছিলেন।


২৮. অতীশ দীপঙ্করের প্রচারিত মতবাদের নাম কী?

উত্তর: মহাযানী বৌদ্ধ ধর্মমত।


২৯. শান্ত রক্ষিত কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তর: শান্ত রক্ষিত আনুমানিক ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা জেলার জাহারো বা সাহোরে (বর্তমান সাভার) এক রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেন।


৩০. অতীশ দীপঙ্কর জন্মস্থান কোথায়?

উত্তর: অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান ৯৮২ (মতান্তরে ৯৮০) খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের বিক্রমপুর পরগণার  অন্তর্গত বজ্রোযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রণ করেন।


৩১. বৈষ্ণব ধর্মের প্রধান অনুষ্ঠান কী?

উত্তর: শ্রীবিষ্ণুর (কৃষ্ণের) নামকীর্তন।


৩২. 'অচিন্ত্যভেদাভেদ তত্ত্ব' কি?

উত্তর: অচিন্ত্যভেদাভেদ তত্ত্ব হলো বৈষ্ণববাদের একটি তত্ত্ব। বৈষ্ণববাদ অনুসারে রাধা ও কৃষ্ণ বিভিন্ন হয়েও অভিন্ন দুই হয়েও এক, যাকে অচিন্ত্যবাদ বলা হয়।


৩৩. গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক কে?

উত্তর: শ্রীচৈতন্যদেব।


৩৪. চৈতন্যদেবের পিতৃ প্রদত্ত নাম কী?

উত্তর: চৈতন্য দেবের পিতৃ প্রদত্ত নাম বিশ্বাম্বর।


৩৫. প্রজ্ঞা-পারমিতা কি?

উত্তর: প্রজ্ঞা-পারমিতা অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞানের গ্রন্থ। তবে ষট পারমিতার শেষ পারমিতা হিসেবে প্রজ্ঞা পারমিতার উল্লেখ আছে।


৩৬. গীতগোবিন্দ কী?

উত্তর: গীতগোবিন্দ ভারতবর্ষের একটি অত্যান্ত জনপ্রিয় কাব্য ওড়িশার মন্দিরে ওড়িশি নৃত্যের গীতগোবিন্ধ গন উপাসনারই একটি অঙ্গ।


৩৭. 'গীত-গোবিন্দম' গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর: 'গীত-গোবিন্দম' গ্রন্থের রচয়িতা হলেন জয়দেব।


৩৮. 'গীতগোবিন্দ' কোন ভাষায় রচিত?

উত্তর: "গীতগোবিন্দ" সংস্কৃত ভাষায় রচিত।


৩৯. বিদ্যাপতি কোন ভাষার কবি ছিলেন? [

উত্তর: সংস্কৃত ভাষার।


৪০. জয়দেব কোন ভাষার কবি ছিলেন?

উত্তর: সংস্কৃত ভাষার।


৪১. 'সুফী' শব্দের উৎপত্তি কোন শব্দ থেকে?

উত্তর: 'সুফী' শব্দের উৎপত্তি সফ বা সাফা শব্দ হতে।


৪২. সুফিবাদের শিক্ষা কি?

উত্তর: দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে ঐশী প্রেমের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভই সুফিবাদের মূল শিক্ষা।


৪৩. সুফিবাদের স্তরগুলোর নাম লিখ।

 উত্তর: সুফিবাদের স্তর চারটি। যথা: শরিয়ত, মারফত, তরিকত, হকিকত।


৪৪. সুফিজমের স্তর কয়টি ও কী কী?

উত্তর: চারটি। যথাঃ শরীয়ত, মারফত, তরিকত,

হকিকত।


৪৫. সুফীবাদের দুটি মূলনীতি লেখ।

উত্তর: সুফীবাদের দুটি মূলনীতি হলো: ১. সবর ও

২. তাওয়াক্কুল


৪৬. সুফিবাদের দু'টি মূলনীতি লিখ।

উত্তর: সুফীবাদের দু'টি মূলনীতি হলো: (ক) তওবা

এবং (খ) পরিবর্জন।


৪৭. 'ফানা' কী?

উত্তর: সুফি তন্ময়তার মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত চেতনাকে মুছে দিয়ে ঐশী চেতনায় উন্নীত হওয়াকে ফানা বলে।


৪৮. 'বাকা' কী?

উত্তর: 'বাকা' মানে ঐশী সত্তায় স্থায়িত্ব লাভ। এই পর্যায়ে সাধক আল্লাহর চেতনায় স্থায়িত্ব লাভ করেন।


৪৯. 'ফানা ও বাকা' কী?

উত্তর: সুফি তন্ময়তার মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত চেতনাকে মুছে দিয়ে ঐশী সত্তায় উপনীত হওয়াই হলো ফানা। আর ঐশী সত্তায় স্থায়িত্ব লাভ করাই হলো বাকা।"


৫০. 'বাউল' শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: বাউল শব্দের অর্থ ভাবের পাগল বা প্রেমের পাগল।


৫১. বাউল কারা?

উত্তর: বাংলার একশ্রেণির অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, একতারা আশ্রয়ী ভাববিদ্রোহী গায়ক ও সমন্বয়মূলক মরমি সাধকের নাম বাউল।


৫২. বাউল দর্শন কী?

উত্তর: বাংলার একশ্রেণির অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, একতারা আশ্রয়ী, ভাববিদ্রোহী গায়ক, স্বাধীন সমন্বয়মূলক মরমি সাধকের আত্মোপলব্ধিমূলক চিন্তাধারার নাম বাউল দর্শন।


৫৩. প্রেম দর্শনের মূলকথা কি?

উত্তর: জাতি নয়, শ্রেণি নয়, কুল নয়, ভক্তি ও প্রেমই মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিচয়, প্রেমই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ।


৫৪. মরমীবাদ কাকে বলে?

উত্তর: মরমিবাদ আধ্যাত্মিক বা আত্মোপলব্ধির দর্শন। পরমসত্তাকে জানার বা পরমসত্তার সঙ্গে একাত্মবোধ মানুষের যে সহজাত বাসনা কিংবা আজীবন পরমসত্তার সান্নিধ্য প্রচেষ্টা তাই মরমিবাদ নামে পরিচিত।


৫৫. বাউল দর্শনে 'চারচন্দ্রভেদ' সাধনা কী?

উত্তর: বাউল দর্শনে 'চারচন্দ্রভেদ' সাধনা হলো শুক্র রজঃ বিষ্ঠা ও মূত্রকে পবিত্র মনে করে একের পর এক এগুলোর ভেদ অতিক্রম করা।


৫৬. "এই মানুষে সেই মানুষ আছে" বলতে লালন শাহা কি বুঝিয়েছেন?

উত্তর: বিরাজমান। মনের মানুষ বা আত্মা আমাদের দেহেই


৫৭. চার্বাক শব্দটির অর্থ কি?

উত্তর: চার্বাক শব্দটির অর্থ মধুর কথা।


৫৮. চার্বাক শব্দটির উৎপত্তিগত অর্থ কী?

উত্তর: চার্বাক শব্দটির উৎপত্তিগত অর্থ মধুর কথা।


৫৯. বৈদিক দর্শন কী? 

উত্তর: আর্য কর্তৃক প্রবর্তিত বেদ ও উপনিষদ কেন্দ্রিক দর্শনই বৈদিক দর্শন।


৬০. বৈদিক দর্শনের উৎস কী?

উত্তর:বৈদিক দর্শনের উৎস হলো বেদ ও উপনিষদ।


৬১. বেদ কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর: চার প্রকার। যথা: ঋকবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অর্থববেদ।


৬২. উপনিষদ বলতে কী বুঝ?

উত্তর: গুরুর সামনে উপবিষ্ট হয়ে বসে শিষ্য যে বিদ্যা গ্রহণ করে তাকে উপনিষদ বলে।


৬৩. উপনিষদ কী?

উত্তর: উপনিষদ অর্থ কারো নিকটে বসা অর্থাৎ গুরুর নিকট বসে যে বিদ্যা গ্রহণ করা হয় তার নাম উপনিষদ।


৬৪. কোন কবি 'কোকিল' কবি নামে পারিচিত?

উত্তর: কবি বিদ্যাপতি 'কোকিল' কবি নামে পারিচিত।


৬৫. 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কে রচনা করেন?

উত্তর: চণ্ডীদাস।


৬৬. চন্ডিদাস কে ছিলেন?

উত্তর: চণ্ডিদাস মধ্যযুগের ভক্তিবাদী দার্শনিক।



























Sunday, 27 July 2025

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস | General Knowledge MCQ | চাকরি প্রস্তুতি"



বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস (MCQ) 


১.৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে প্রথম মৃত্যুবরণ করেন কে?

উত্তরঃ মোঃ মোস্তফা কামাল (৮ এপ্রিল ১৯৭১)।

২. বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক কে? 

উত্তরঃ শেখ মুজিবুর রহমান। 

৩. কবে, কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন? 

উত্তরঃ ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাত বারোটার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। 

৪. কে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষনা প্রচার করেন? 

উত্তরঃ চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান, চট্টগ্রাম বেতার হতে ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। 

৫. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম, কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচার করেন? 

উত্তরঃ তদানীন্তন মেজর পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর প্রধান এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে। 

৬. বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কে? 

উত্তরঃ শহিদুল ইসলাম চৌধুরী। 

৭. চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করা হয় কবে? 

উত্তরঃ ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে। 

৮. ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণ করেন কে? 

উত্তরঃ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। 

৯. মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ কখন কোথায় সংঘটিত হয়? 

উত্তরঃ ১৯ মার্চ ১৯৭১ সালে গাজীপুরে। 

১০. মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ কারা গড়ে তোলেন? 

উত্তরঃ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। 

১১. শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় কবে? 

উত্তরঃ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে। 

১২. যুদ্ধের সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে কোথায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল? 

উত্তরঃ পাকিস্তানের করাচি শহরের মিয়াওয়ালি কারাগারে। 

১৩. শেখ মুজিবুর রহমানকে কবে মুক্তি দেয়া হয়? 

উত্তরঃ ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে। 

১৪. শেখ মুজিবুর রহমান কবে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন? 

উত্তরঃ ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে। 

১৫. স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকালীন শেখ মুজিব কোন কোন দেশ সফর করেছিলেন?

উত্তরঃ ব্রিটেন ও ভারত (লন্ডন ও নয়াদিল্লি)।

১৬. বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয় কবে কোথায়? 

উত্তরঃ ২ মার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।  

১৭. বাংলাদেশের পতাকা প্রথম কে উত্তোলন করেন? 

উত্তরঃ আ স ম আব্দুর রব। 

১৮. শেখ মুজিবুর রহমানের কোন ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যে স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষনা উপ্ত ছিল? 

উত্তরঃ রেসকোর্স ময়দানের ৭ মার্চ 1971 সালের ভাষণ। 

১৯. বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাজধানী কোথায় ছিল?

উত্তরঃ মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর। 

২০. মুজিবনগর এর পুরাতন নাম কি ছিল? 

উত্তরঃ বৈদ্যনাথ তলার ভবেরপাড়া। 

২১. কে বৈদ্যনাথ তলার নাম মুজিবনগর রাখেন? 

উত্তরঃ তাজউদ্দিন আহমেদ। 

২২. মুজিবনগরে কোন তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল? 

উত্তরঃ ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। 

২৩. বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্র ঘোষণা হয়েছিল কোন তারিখে? 

উত্তরঃ ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। 

২৪. বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় কবে? 

উত্তরঃ ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। 

২৫. মুজিবনগর পূর্বে কোন জেলার অধীনে ছিল? 

উত্তরঃ কুষ্টিয়া জেলার। 

২৬. সম্প্রতি বাংলাদেশ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার "বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা" প্রদান করেন কাকে? 

উত্তরঃ ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে।

২৭. অস্থায়ী সরকারের শপথ বাক্য কে পাঠ করান?

উত্তরঃ অধ্যাপক ইউসুফ আলী। 

২৮. অস্থায়ী সরকারের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কে?

উত্তরঃ অধ্যাপক ইউসুফ আলী। 

২৯. অস্থায়ী সরকারের সদস্য সংখ্যা কত ছিল? 

উত্তরঃ ৬ জন। 

৩০. অস্থায়ী সরকারের প্রধান কে ছিলেন? 

উত্তরঃ শেখ মুজিবুর রহমান (রাষ্ট্রপতি)।

৩২. বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট কে ছিলেন? 

উত্তরঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। 

৩৩. অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন? 

উত্তরঃ তাজউদ্দিন আহমেদ। 

৩৪. 'অপারেশন ক্লোজডোর' কেন পরিচালনা করা হয়? 

উত্তরঃ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর সকল প্রকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য 'অপারেশন ক্লোজডোর' পরিচালনা করা হয়। 

৩৫. দেশের বাইরে প্রথম মুক্তিযুদ্ধ লাইবেরি উদ্বোধন করা হয় কোথায়? 

উত্তরঃ লন্ডনে (৫ মে ২০১১)। 

৩৬. কে কোন তারিখে বিদেশে মিশনেজ বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন? 

উত্তরঃ এম হোসেন আলী ১৮ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে।

৩৭. পাকিস্তান হাইকমিশন অফিস প্রধানদের মধ্যে কে প্রথম বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন? 

উত্তরঃ ভারতের কলকাতাস্ত পাকিস্তান ডেপুটি হাইকমিশন অফিসের প্রধান এম হোসেন আলী ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। 

৩৮. নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে 'জাতীয় শোক দিবস' পালিত হয় ১৯৭২ সালের কত তারিখে? 

উত্তরঃ ১৪ জানুয়ারি। 

৩৯. কার নির্দেশে, কে দেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করেছিলেন? 

উত্তরঃ তাজউদ্দীন আহমদের নির্দেশে এমএজি ওসমানী দেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করেন। 

৪০. কোন সেক্টরটি ব্যতিক্রমধর্মী সেক্টর ছিল? 

উত্তরঃ ১০ নং সেক্টর। 

৪১. বাংলাদেশ একমাত্র নৌ সেক্টর কোনটি?

উত্তরঃ ১০ নং সেক্টর। 

৪২. মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য মতিউর রহমান যে বিমানটি ছিনিয়ে নিয়ে দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন তার নাম কি? 

উত্তরঃ টি ৩৩ (এর ছদ্মনাম ব্লু বার্ড)।

৪৩. ১৯৯৭ সালে সিলেটে যে মহিলা মুক্তিযোদ্ধার সন্ধান পাওয়া যায় তার নাম কি? 

উত্তরঃ কাকন বিবি।

৪৪. স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি লাভ করে কতজন?

উত্তরঃ ৭ জন। 

৪৫. বীরশ্রেষ্ঠ লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান কোথায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান? 

উত্তরঃ পাকিস্তানে। 

৪৬. সর্বশেষ বীর উত্তম উপাধি দেয়া হয় কাকে? 

উত্তরঃ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল উদ্দিন আহমদকে। 

৪৭. ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের মতো সর্বশেষ মৃত্যুবরণ করেন কে? 

উত্তরঃ মফিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১)।

৪৮. মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য মতিউর রহমান যে বিমানটি ছিনিয়ে নিয়ে দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন তার নাম কি? 

উত্তরঃ টি ৩৩ (এর ছদ্মনাম ব্লু বার্ড)।

৪৯. স্বাধীনতা যুদ্ধ অবদানের জন্য মোট কতজনকে রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদান করা হয়? 

উত্তরঃ ৬৭৭ জনকে। 

৫০. বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানের শূন্য কত ছিল? 

উত্তরঃ ২ লাখ ৩৮ হাজার। 

৫১. কোন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা কোনো রাষ্ট্রের খেতাব পাননি?

উত্তরঃ কাকন বিবি। 

৫২. তারামন বিবি কত নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন?

উত্তরঃ ১১ নং সেক্টরে (ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল)।

৫৩. তারামন বিবির বাড়ি কোথায়? 

উত্তরঃ কুড়িগ্রাম। 

৫৪. তারামন বিবিকে সরকার কোথায় বাড়ি প্রদান করেন? 

উত্তরঃ কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর থানায়। 

৫৫. সেতারা বেগম কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেন? 

উত্তরঃ ৪ নং সেক্টরে (সিলেট)। 

৫৬. সেতারা বেগমের বাড়ি কোথায়? 

উত্তরঃ কিশোরগঞ্জ (বৃহত্তর ময়মনসিংহ)। 

৫৭. কাকন বিবির বাড়ি কোন জেলায়? 

উত্তরঃ সিলেট। 

৫৮. দেশের একমাত্র আদিবাসী বা উপজাতি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কে? 

উত্তরঃ ইউ কে চীং বীর বিক্রম। 

৫৯. বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের কবর কোথায়? 

উত্তরঃ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় জাহাজের ইঞ্জিনে আগুন লেগে পুড়ে মারা যান। প্রথম অবস্থায় তার মৃতদেহ বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে তুলে খুলনার রূপসা নদীর তীরে কবর দেয়া হয়। 

৬০. বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবর কোথায় ছিল? 

উত্তরঃ পাকিস্তানের করাচির মাশরুর বিমান ঘাঁটিতে। 

৬১. বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবর (মৃতদেহ)কবে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়? 

উত্তরঃ ২৪ জন ২০০৬ সালে। 

৬২. বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান কে যথাযথ মর্যাদায় কবে, কোথায় সমাহিত করা হয়? 

উত্তরঃ ২৫ জন ২০০৬ সালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। 

৬৩. বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কবর কোথায় ছিল? 

উত্তরঃ ভারতের আমবাসা এলাকায়। 

৬৪. বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কবর (মৃতদেহ) কবে বাংলাদেশের নিয়ে আসা হয়? 

উত্তরঃ ১০ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে। 

৬৫. বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে যথার্থ মর্যাদা কবে, কোথায় সময়িত করা হয়? 

উত্তরঃ ১১ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। 

৬৬. ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে কতজন কোন বাহিনীর ছিলেন? 

উত্তরঃ ৩ জন সেনাবাহিনী, ২ জন ইপিআর ১ জন নৌবাহিনী ও ১ জন বিমান বাহিনী। 

৬৭. জেনারেল ওসমানী কবে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন? 

উত্তরঃ ১৮ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। 

৬৮. বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকারের প্রথম বিমান বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন? 

উত্তরঃ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। 

৬৯. ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ব্রিগেড আকারে কয়টি ফোর্স গঠিত হয়েছিল এবং কি কি? 

উত্তরঃ ৩ টি। যথা- 

ক) জেড ফোর্স- মেজর জিয়াউর রহমান 

খ) এস ফোর্স- মেজর শফিউল্লাহ 

গ) কে ফোর্স- মেজর খালেদ মোশারফ। 

৭০. বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে কারা মুক্তিযুদ্ধ করে? 

উত্তরঃ টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনী, বরিশালের হেমায়েত বাহিনী, কমরেড তোহা ও সিরাজ শিকদার। 

৭১. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কত লোক প্রাণ হারান? 

উত্তরঃ প্রায় ৩০ লক্ষ। 

৭২. সাইমন ড্রিং কে? 

উত্তরঃ ১৯৭১ সালে ঢাকায় কর্মরত ব্রিটিশ সাংবাদিক, যিনি বহির্বিশ্বের সর্বপ্রথম বাংলাদেশে পাকিস্তানি বর্বরতার খবর প্রকাশ করেন। 

৭৩. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাইমন ড্রিং এর অবদান কি? 

উত্তরঃ ১৯৭১ সালে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে তিনি পাক দখলদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেন এবং বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করেন। 

৭৪. অপারেশন সার্চলাইট কি?

উত্তরঃ নিরীহ বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর 1971 সালের 25 মার্চ কাল রাতে পরিচালিত সামরিক আগ্রাসন বা হত্যাযজ্ঞ। 

৭৫. অপারেশন জ্যাকপট কি?

উত্তরঃ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি নৌ শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য পরিচালিত অভিযান। 

৭৬. একমাত্র বিদেশী খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কে? 

উত্তরঃ বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন হোয়াইল হ্যামার ওয়াডারল্যান্ড। 

৭৭. হোয়াইল হ্যামার ওয়াডারল্যান্ড কোন দেশের নাগরিক?  

উত্তরঃ অস্ট্রেলিয়ার জন্ম নেদারল্যান্ড। 

৭৮. হোয়াইল হ্যামার ওয়াডারল্যান্ড কবে মৃত্যুবরণ করেন? 

উত্তরঃ ১৮ মে ২০০১ সালে। 

৭৯. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যে বিদেশি নাগরিক মারা যান তার নাম কি? 

উত্তরঃ মাদার মারিও ভেরেনজি। 

৮০. মাদার মারিও বেরেনজি কবে মৃত্যুবরণ করেন এবং কোন দেশি?

উত্তরঃ ৪ এপ্রিল ১৯৭১ সালে ইতালির নাগরিক। 

৮১. স্বাধীনতা যুদ্ধে অর্থ সংগ্রহের জন্য কারা কবিতা পাঠের আয়োজন করেন তারা কোন দেশের এবং কে কে? 

উত্তরঃ ইয়েভগেনি ইয়েভ তুসোস্কোর (রাশিয়া), এলেন গিনেসবার্গ আমেরিকা। 

৮২. "September on Jessore road" বইটি কে রচনা করেন? 

উত্তরঃ মার্কিন কবি অ্যালেন গিনেসবার্গ। 

৮৩. জর্জ হ্যারিসন কে কোথায় বিসর্জন দেয়া হয়েছে? 

উত্তরঃ গঙ্গা নদীতে (ভারতে)। 

৮৪. জাতিসংঘের কোন দুটি শক্তিশালী দেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে বিরোধিতা করে? 

উত্তরঃ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। 

৮৫. জাতিসংঘের কোন শক্তিশালী দেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে? 

উত্তরঃ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া)। 

৮৬. মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের যুবকদের নিয়ে যে বাহিনী গঠন করা হয় তার নাম কি? 

উত্তরঃ মুজিব বাহিনী (বিএলএফ)। 

৮৭. ঢাকা সেনানিবাসস্থ মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের নাম কি? 

উত্তরঃ বিজয় কেতন। 

৮৮. মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা কোনটি এবং কত তারিখে? 

উত্তরঃ যশোর। ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। 

৮৯. মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণাঙ্গন কোনটি এবং কবে শত্রুমুক্ত হয়? 

উত্তরঃ ঢাকার মিরপুর, শত্রুমুক্ত হয় ৩১ জানুয়ারি ১৯৭১ সাল। 

৯০. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শহীদুল ইসলামের বয়স কত ছিল? 

উত্তরঃ ১২ বছর।

৯১. মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য শহিদুল ইসলামকে কি খেতাব দেওয়া হয়? 

উত্তরঃ বীর প্রতীক। 

৯২. শহিদুল ইসলাম কত নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন? 

উত্তরঃ ১১ নং সেক্টরের (ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল)। 

৯৩. "এ দেশের মাটি চাই, মানুষ নয়" এ উক্তিটি কার? 

উত্তরঃ ইয়াহিয়া খানের। 

৯৪. বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার কোনটি? 

উত্তরঃ বীরশ্রেষ্ঠ। 

৯৫. ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী কবে গঠিত হয়? 

উত্তরঃ ২১ নভেম্বর ১৯৭১ সাল। 

৯৬. ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনীর প্রধান কে ছিলেন? 

উত্তরঃ ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল স্যাম হরমুসজি ফ্রামজি জামশেদজি মানেকশ।

৯৭. বাংলাদেশ ভারত যৌথ কমান্ডের সেরা দক্ষ কে ছিলেন? 

উত্তরঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। 

৯৮. পাকিস্তানি পক্ষের নেতৃত্বে কে ছিলেন? 

উত্তরঃ জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী। 

৯৯. মুক্তিযুদ্ধে আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক দলিলে কে কে স্বাক্ষর করেন? 

উত্তরঃ বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের প্রধান জেনারেল সিং অরোরা ও পাকিস্তানের পক্ষে জেনারেল এ কে নিয়াজী।

১০০. মুক্তিযুদ্ধের আত্মসমর্পণের দলিল কোথায় স্বাক্ষরিত হয়? 

উত্তরঃ রেসকোর্স ময়দানে। 

১০১. কতজন পাকিস্তানের শূন্য যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে? 

উত্তরঃ ৯৩ হাজার। 

১০২. ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে বা মুক্তিবাহিনীর পক্ষে কে নেতৃত্ব দেন? 

উত্তরঃ তৎকালীন বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার। 

১০৩. কোন ফরাসি সাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন? 

উত্তরঃ আদ্রে মায়ারা। 

১০৪. কোন সাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাব লাভ করেন? 

উত্তরঃ আব্দুস সাত্তার। 

১০৫. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে 'চরমপত্র' নামক একটি কথিকা প্রচারিত হতো সেই কথিকার পাঠক কে ছিলেন? 

উত্তরঃ এম আর আখতার মুকুল। 

১০৬. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কলকাতায় অবস্থিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পরিচালক কে ছিলেন? 

উত্তরঃ শামসুর রহমান চৌধুরী। 

১০৭. অস্থায়ী সরকারের সচিবালয় কোথায় ছিল? 

উত্তরঃ ৮ থিয়েটার রোড, কলকাতা। 

১০৮. মহান মুক্তিযুদ্ধে কতটি সাংগঠনিক শ্রেণী ছিল ও কি কি? 

উত্তরঃ তিনটি। যথা- 

ক) নিয়মিত বাহিনী 

খ) সেক্টর বাহিনী 

গ) গেরিলা বাহিনী 

১০৯. অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অফ অনার্স দেয়া হয় কার নেতৃত্বে? 

উত্তরঃ ইপি আর এর ৪ নং উইংয়ের একটি সুসজ্জিত দল ক্যাপ্টেন মাহবুবুল হাসানের নেতৃত্বে। 

১১০. ছাত্রলীগের জয় বাংলা বাহিনী প্রদত্ত কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধুকে দেয়া সালামের নেতৃত্ব দেন কারা?

উত্তরঃ নূরে আলম সিদ্দিকী, আ.স.ম আব্দুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজ।

১১১. কার অসম সাহসিকতায় বাঙালি জাতি জেনেছিল যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এবং প্রতিরোধমুক্ত শুরু হয়ে গেছে?

উত্তরঃ মেজর জিয়াউর রহমান। 

১১২. বি.এল.এফ (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স) গঠিত হয়েছিল কাদেরকে নিয়ে?

উত্তরঃ বাংলাদেশের যুবকদের নিয়ে। 

১১৩. বি.এল.এফ এর প্রধান প্রশিক্ষনে কে ছিলেন? 

উত্তরঃ হাসানুল হক ইনু। 

১১৪. মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট কে প্রতিষ্ঠা করেন? 

উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

১১৫. মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত পত্রিকার নাম কি? 

উত্তরঃ মুক্তিবার্তা (সাপ্তাহিক)।

১১৬. মুক্তিযুদ্ধকালীন কোন তারিখে বুদ্ধিজীবীদের উপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়? 

উত্তরঃ ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে। 

১১৭. বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস কোন তারিখে? 

উত্তরঃ ১৪ই ডিসেম্বর। 

১১৮. ডাক্তার সেতারা বেগম সেনাবাহিনীতে কি পদে ছিলেন? 

উত্তরঃ ক্যাপ্টেন। 

১১৯. বাংলাদেশ কবে পাক হানাদার মুক্ত হয়? 

উত্তরঃ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। 

১২০. ২৬ মার্চকে 'জাতীয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে' ঘোষণা করা হয় কখন? 

উত্তরঃ ১৯৮০ সালে।

১২১. মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে? 

উত্তরঃ তানভীর কবির।

১২২. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা শহর কোন সেক্টরের অধীনে ছিল? 

উত্তরঃ ২ নং সেক্টরের। 

১২৩. বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন কবে? 

উত্তরঃ ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে। 

১২৪. মুক্তিযুদ্ধের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ফেনী প্রভৃতি এলাকা কত নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল? 

উত্তরঃ ১ নং সেক্টরের। 

১২৫. মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর কত নং সেক্টরে ছিল? 

উত্তরঃ ৮ নং সেক্টরে। 

১২৬. মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর ঢাকার কোন এলাকায় অবস্থিত? 

উত্তরঃ সেগুন বাগিচা। 

১২৭. ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কে বলেছে 'লোকটি এবং তার দল পাকিস্তানের শত্রু এবার তারা শাস্তি এড়াতে পারবে না'।

উত্তরঃ জেনারেল টিক্কা খান। 

১২৮. ১৯৭১ সালের কত তারিখে বাংলাদেশ হতে বিদেশীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিমান হামলা বন্ধ রাখা হয় ? 

উত্তরঃ ১০ ডিসেম্বর। 

১২৯. প্রবাসী সরকারের সচিবালের মুখ্য সচিব কে ছিলেন? 

উত্তরঃ রুহুল কুদ্দুস।


চর্যাপদের সহজিয়া দর্শন কি?

 প্রশ্ন - ১২: চর্যাপদের সহজিয়া দর্শন কি? উত্তর: বাংলা সাহিত্য ও দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ ও আদি নিদর্শন হলো চর্যাপদ বা চর্যাগীতি। চর্যাপদের পদগুল...