প্রশ্ন - ৫: যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদ সম্পর্কে শান্ত রক্ষিতের বক্তব্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা, যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদ সম্পর্কে শান্ত রক্ষিতের বক্তব্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর :
ভূমিকা: খ্রিস্টের জন্মের অনেক আগেই বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্মের আগমন ঘটে। তবে সম্রাট অশোক (খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩-২৩২) এর রাজত্বকালে বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম বিস্তার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পাল আমলে বৌদ্ধধর্ম দর্শন সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করে। তাই বিশ্বে যে কয়জন মহান বৌদ্ধ দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে তাদের মধ্যে শান্তরক্ষিতের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি সুদূর তিব্বতে গিয়ে নিজের মতকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
শান্তরক্ষিতের দর্শনতত্ত্ব: শান্তরক্ষিত ছিলেন বৌদ্ধধর্ম ও দর্শনের একজন বড় পণ্ডিত। তাঁর দর্শন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় নি। তবে তিনি বিজ্ঞানবাদী ও যোগাচারবাদী হিসেবে অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠভাবে জীবনকে দেখার চেষ্টা করেছেন। তাঁর দর্শনের প্রধান যুক্তি ছিল কোন কিছু গ্রহণ করা বা বর্জন করা।
তিব্বতের রাজা ঠিস্রোং শান্তরক্ষিতের ভাষা বুঝতেন না। তাঁর ভাষা বুঝার জন্য তিনি তিনজন লোককে তার নিকট পাঠালেন। তারা শান্তরক্ষিতের ভাষা বুঝলেন না। অতঃপর তিনি কাশ্মীরি পণ্ডিত অনন্তকে তার নিকট পাঠালেন এবং রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন। গোই লোচাবা এ প্রসঙ্গে বলেন যে, রাজা মন্ত্রীদের আদেশ দিলেন বৌদ্ধধর্মের উপাধ্যায় বা' শান্তরক্ষিতকে রাজপ্রাসাদে আনা হোক। মন্ত্রীরা উপাধ্যায়ের নিকট গিয়ে রাজার কথা জানালেন। উত্তরে উপাধ্যায় বা শান্তরক্ষিত বললেন, যুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষানিরীক্ষা করে যেটা ভালো মনে হবে সেটাকে আমি গ্রহণ করব। আর অন্যটিকে বর্জন করব। শান্তরক্ষিত- তার এ যুক্তিবাদকে তিব্বতে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তিব্বতে প্রচলিত পোন ধর্মের অযৌক্তিক জাদু মন্ত্র, ভূত প্রেতবাদে বিশ্বাসীসহ নানা গুহ্য সাধন মতবাদের বিরোধিতার সম্মুখীন হন। তিনি তাঁর শিষ্য পদ্মসম্ভব ও কমলশীলের সাহায্যে এ বিরোধিতাকে অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
শান্তরক্ষিত নিজেকে একজন দার্শনিক ধর্মপ্রচারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ধর্মপ্রচারের পাশাপাশি বেশকিছু মূল্যবান দার্শনিক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে 'তত্ত্বসংগ্রহ' অত্যন্ত মূল্যবান একটি দার্শনিক গ্রন্থ। তাছাড়া অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলো অষ্ট তথাগত স্তোত্র, বজ্রধর সংগীত ভগবতস্তোত্র টীকা, তত্ত্ব সংগ্রহ কারিকা, হেবজ্র উদ্ভব কুরকুলাহ, পঞ্চ মহোপদেশ, তথাসিদ্ধিনাম প্রকরণ, বিভংগ পঞ্জিকা, মধ্যমক অলংকার, ভাদন্যায় ভিত্তি, দগুলেখা প্রভৃতি।
উপসংহার: শান্তরক্ষিত শুধু জ্ঞানী ব্যক্তি ও পণ্ডিতই ছিলেন না। তিনি জনসাধারণের বন্ধুও ছিলেন। তিনি তাঁর পাণ্ডিত্যকে জনগণের মাঝে বিলীন করার সফলতাও অর্জন করেছিলেন। তিনি তিব্বতের জনগণের মধ্যে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করতে পেরেছিলেন। বৌদ্ধধর্মে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাই বৌদ্ধধর্মে তার অবদানের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
No comments:
Post a Comment