এখানে বিগত সালের প্রশ্ন সহ কিছু গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো। আশাকরি পরিক্ষায় এখান থেকে অধিকাংশ প্রশ্ন পাবেন।
বাঙালির দর্শন: প্রাচীন ও মধ্যযুগ(অনার্স তৃতীয় বর্ষ)বিষয় কোড: 231709
ক-বিভাগ :
১. বাঙালির দর্শন কি?
উত্তর: বিভিন্ন যুগে বাঙালির চিন্তা-চেতনা মননে জগৎ, জীবন, ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ ও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে যে দার্শনিক মতবাদ গড়ে উঠেছে তাই বাঙালির দর্শন।
২. বাঙালির দর্শন চর্চার সূচনা করেন কারা?
উত্তর: প্রাচীন বাঙালিরা অর্থাৎ অনার্যরা এদেশে দর্শন চর্চার সূত্রপাত করেন।
৩. বাঙালির দর্শনের সূচনা কোথা থেকে হয়?
উত্তর: প্রাচীন বাংলার লোকায়ত বা চার্বাক সম্প্রদায় হতে।
৪. 'বাঙালি' শব্দটির উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে?
উিত্তর: বঙ্গাল শব্দ হতে।
৫. বাঙালি দর্শনের দুটি অবৈদিক উপাদান লেখ।
উত্তর: বাঙালি দর্শনের দু'টি অবৈদিক উপাদান শাক্ত ও শৈব মত।
৬. বাঙালি দর্শনের প্রাচীন ও মধ্যযুগের সময়কাল লেখ।
উত্তর: খ্রিষ্টপূর্ব যুগ থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত (প্রাচীন কাল)। দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত (মধ্যযুগ)।
৭.বাঙালি দর্শন কি সমন্বয়ধর্মী?
উত্তর: হ্যাঁ বাঙালি দর্শন সমন্বয়ধমী।
৮. বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন কোনটি?
উত্তর: চর্যাপদ।
৯. চর্যাপদ কি?
উত্তর: বৌদ্ধ সহজিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মসাধনার নিগূঢ় পদ্ধতি ও বাণী সম্বলিত গীতি সংকলনকে চর্যাপদ বলে।
১০. চর্যাপদ কীসের সংকলন?
উত্তর:বৌদ্ধ মহাজিয়া গীতি সংকলন।
১১. চর্যাপদের পদকর্তা কতজন?
উত্তর: চর্যাপদের পদকর্তা ২৪ জন।
১২. চর্যাপদ কোথায় পাওয়া গিয়েছিল?
উত্তর: মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদ পাওয়া গিয়েছিল।
১৩. বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের নাম লেখ।
উত্তর: ত্রিপিটক।
১৪. 'বৌদ্ধ' ধর্মগ্রন্থের নাম এবং প্রকারভেদ লিখ।
উত্তর: বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের নাম ত্রিপিটক এবং প্রকারভেদ : ১. বিনয় পিটক, ২. সুত্ত পিটক ও ৩. অভিধম্ম পিটক।
১৪. 'সকলই দুঃখময়'-কে বলেছেন?
উত্তর: 'সকলই দুঃখময়' গৌতম বুদ্ধ বলেছেন।
১৬. বুদ্ধের চারটি আর্যসত্য লিখ।
উত্তর: চারটি আর্যসত্য হলো: (ক) দুঃখ আছে, (খ) দুঃখের কারণ আছে (গ) দুঃখের নিবৃত্তি আছে (ঘ) দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে।
১৭. 'বোধিচিত্ত কি?
উত্তর: তিনিই বোধিসত্ত্ব, যিনি কুশল কর্ম ও সদাচার অনুষ্ঠান দ্বারা পরম মুক্তি বা নির্বাণ প্রাপ্ত হয়ে অবলীলাক্রমে তা অগ্রাহ্য করে বিশ্বের কল্যাণ ও মুক্তি কামনায় আত্মোৎসর্গ করেছেন এবং জগতের দুঃখদাহের মধ্যে অগণিত মানুষের দুঃখের বোঝা গ্রহণ করতে দৃঢ়সংকল্প, পারমিতাসমূহ আচরণ করে উদয়নের পথে দশভূমি অতিক্রম করে যিনি বুদ্ধত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
১৮. বাংলাদেশে বসবাসকারী বৌদ্ধদের মধ্যে প্রভাবশালী ধারা কোনটি?
উত্তর: বজ্রযান বা সহজযান।
১৯. সহজিয়া কী?
উত্তর: সহজিয়া একটি বিশেষ ধর্মসম্প্রদায় যারা
সহজপথে সাধনা করে।
২০. বৌদ্ধধর্মের প্রধান দুটি সম্প্রদায়ের নাম কী কী?
উত্তর: বৌদ্ধধর্মের প্রধান দুটি সম্প্রদায়ের নাম হলো: হীনযান সম্প্রদায় এবং মহাযান সম্প্রদায়।
২১. হীনযান কারা?
উত্তর: হীনযান একটি বৌদ্ধ সম্প্রদায় যারা মনে করে প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর নিজের মুক্তির জন্য চেষ্টা করবে, অন্যের মুক্তির কথা চিন্তা করা তার কাজ নয়।
২২. মহাযান কারা?
উত্তর: যারা নিজের মুক্তি কামনা না করে সর্বজীবের মুক্তি কামনা করে তারাই মহাযান।
২৩. শান্ত রক্ষিতকে তিব্বতীয়রা কী নামে ডাকত? উত্তর: শান্ত রক্ষিতকে তিব্বতীয়রা শিবাছো বা শান্তি জীব নামে ডাকত।
২৪. শান্তরক্ষিত কোন বৌদ্ধ বিহারের আচার্য ছিলেন?
উত্তর: শান্তরক্ষিত ছিলেন নালন্দা বৌদ্ধ বিহারের আচার্য।
২৫. শান্তরক্ষিত কে ছিলেন?
উত্তর: শান্তরক্ষিত ছিলেন নালন্দা বিহারের আচার্য, বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শন প্রচারক।
২৬. শীলভদ্র কে?
উত্তর: শীলভদ্র ছিলেন একজন বৌদ্ধ দার্শনিক।
২৭. শীলভদ্র কোন মহাবিহারের আচার্য ছিলেন?
উত্তর: শ্রীলভদ্র নালন্দা মহাবিহারের আচার্য ছিলেন।
২৮. অতীশ দীপঙ্করের প্রচারিত মতবাদের নাম কী?
উত্তর: মহাযানী বৌদ্ধ ধর্মমত।
২৯. শান্ত রক্ষিত কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: শান্ত রক্ষিত আনুমানিক ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা জেলার জাহারো বা সাহোরে (বর্তমান সাভার) এক রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেন।
৩০. অতীশ দীপঙ্কর জন্মস্থান কোথায়?
উত্তর: অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান ৯৮২ (মতান্তরে ৯৮০) খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের বিক্রমপুর পরগণার অন্তর্গত বজ্রোযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রণ করেন।
৩১. বৈষ্ণব ধর্মের প্রধান অনুষ্ঠান কী?
উত্তর: শ্রীবিষ্ণুর (কৃষ্ণের) নামকীর্তন।
৩২. 'অচিন্ত্যভেদাভেদ তত্ত্ব' কি?
উত্তর: অচিন্ত্যভেদাভেদ তত্ত্ব হলো বৈষ্ণববাদের একটি তত্ত্ব। বৈষ্ণববাদ অনুসারে রাধা ও কৃষ্ণ বিভিন্ন হয়েও অভিন্ন দুই হয়েও এক, যাকে অচিন্ত্যবাদ বলা হয়।
৩৩. গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক কে?
উত্তর: শ্রীচৈতন্যদেব।
৩৪. চৈতন্যদেবের পিতৃ প্রদত্ত নাম কী?
উত্তর: চৈতন্য দেবের পিতৃ প্রদত্ত নাম বিশ্বাম্বর।
৩৫. প্রজ্ঞা-পারমিতা কি?
উত্তর: প্রজ্ঞা-পারমিতা অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞানের গ্রন্থ। তবে ষট পারমিতার শেষ পারমিতা হিসেবে প্রজ্ঞা পারমিতার উল্লেখ আছে।
৩৬. গীতগোবিন্দ কী?
উত্তর: গীতগোবিন্দ ভারতবর্ষের একটি অত্যান্ত জনপ্রিয় কাব্য ওড়িশার মন্দিরে ওড়িশি নৃত্যের গীতগোবিন্ধ গন উপাসনারই একটি অঙ্গ।
৩৭. 'গীত-গোবিন্দম' গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তর: 'গীত-গোবিন্দম' গ্রন্থের রচয়িতা হলেন জয়দেব।
৩৮. 'গীতগোবিন্দ' কোন ভাষায় রচিত?
উত্তর: "গীতগোবিন্দ" সংস্কৃত ভাষায় রচিত।
৩৯. বিদ্যাপতি কোন ভাষার কবি ছিলেন? [
উত্তর: সংস্কৃত ভাষার।
৪০. জয়দেব কোন ভাষার কবি ছিলেন?
উত্তর: সংস্কৃত ভাষার।
৪১. 'সুফী' শব্দের উৎপত্তি কোন শব্দ থেকে?
উত্তর: 'সুফী' শব্দের উৎপত্তি সফ বা সাফা শব্দ হতে।
৪২. সুফিবাদের শিক্ষা কি?
উত্তর: দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে ঐশী প্রেমের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভই সুফিবাদের মূল শিক্ষা।
৪৩. সুফিবাদের স্তরগুলোর নাম লিখ।
উত্তর: সুফিবাদের স্তর চারটি। যথা: শরিয়ত, মারফত, তরিকত, হকিকত।
৪৪. সুফিজমের স্তর কয়টি ও কী কী?
উত্তর: চারটি। যথাঃ শরীয়ত, মারফত, তরিকত,
হকিকত।
৪৫. সুফীবাদের দুটি মূলনীতি লেখ।
উত্তর: সুফীবাদের দুটি মূলনীতি হলো: ১. সবর ও
২. তাওয়াক্কুল
৪৬. সুফিবাদের দু'টি মূলনীতি লিখ।
উত্তর: সুফীবাদের দু'টি মূলনীতি হলো: (ক) তওবা
এবং (খ) পরিবর্জন।
৪৭. 'ফানা' কী?
উত্তর: সুফি তন্ময়তার মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত চেতনাকে মুছে দিয়ে ঐশী চেতনায় উন্নীত হওয়াকে ফানা বলে।
৪৮. 'বাকা' কী?
উত্তর: 'বাকা' মানে ঐশী সত্তায় স্থায়িত্ব লাভ। এই পর্যায়ে সাধক আল্লাহর চেতনায় স্থায়িত্ব লাভ করেন।
৪৯. 'ফানা ও বাকা' কী?
উত্তর: সুফি তন্ময়তার মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত চেতনাকে মুছে দিয়ে ঐশী সত্তায় উপনীত হওয়াই হলো ফানা। আর ঐশী সত্তায় স্থায়িত্ব লাভ করাই হলো বাকা।"
৫০. 'বাউল' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: বাউল শব্দের অর্থ ভাবের পাগল বা প্রেমের পাগল।
৫১. বাউল কারা?
উত্তর: বাংলার একশ্রেণির অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, একতারা আশ্রয়ী ভাববিদ্রোহী গায়ক ও সমন্বয়মূলক মরমি সাধকের নাম বাউল।
৫২. বাউল দর্শন কী?
উত্তর: বাংলার একশ্রেণির অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, একতারা আশ্রয়ী, ভাববিদ্রোহী গায়ক, স্বাধীন সমন্বয়মূলক মরমি সাধকের আত্মোপলব্ধিমূলক চিন্তাধারার নাম বাউল দর্শন।
৫৩. প্রেম দর্শনের মূলকথা কি?
উত্তর: জাতি নয়, শ্রেণি নয়, কুল নয়, ভক্তি ও প্রেমই মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিচয়, প্রেমই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ।
৫৪. মরমীবাদ কাকে বলে?
উত্তর: মরমিবাদ আধ্যাত্মিক বা আত্মোপলব্ধির দর্শন। পরমসত্তাকে জানার বা পরমসত্তার সঙ্গে একাত্মবোধ মানুষের যে সহজাত বাসনা কিংবা আজীবন পরমসত্তার সান্নিধ্য প্রচেষ্টা তাই মরমিবাদ নামে পরিচিত।
৫৫. বাউল দর্শনে 'চারচন্দ্রভেদ' সাধনা কী?
উত্তর: বাউল দর্শনে 'চারচন্দ্রভেদ' সাধনা হলো শুক্র রজঃ বিষ্ঠা ও মূত্রকে পবিত্র মনে করে একের পর এক এগুলোর ভেদ অতিক্রম করা।
৫৬. "এই মানুষে সেই মানুষ আছে" বলতে লালন শাহা কি বুঝিয়েছেন?
উত্তর: বিরাজমান। মনের মানুষ বা আত্মা আমাদের দেহেই
৫৭. চার্বাক শব্দটির অর্থ কি?
উত্তর: চার্বাক শব্দটির অর্থ মধুর কথা।
৫৮. চার্বাক শব্দটির উৎপত্তিগত অর্থ কী?
উত্তর: চার্বাক শব্দটির উৎপত্তিগত অর্থ মধুর কথা।
৫৯. বৈদিক দর্শন কী?
উত্তর: আর্য কর্তৃক প্রবর্তিত বেদ ও উপনিষদ কেন্দ্রিক দর্শনই বৈদিক দর্শন।
৬০. বৈদিক দর্শনের উৎস কী?
উত্তর:বৈদিক দর্শনের উৎস হলো বেদ ও উপনিষদ।
৬১. বেদ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর: চার প্রকার। যথা: ঋকবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অর্থববেদ।
৬২. উপনিষদ বলতে কী বুঝ?
উত্তর: গুরুর সামনে উপবিষ্ট হয়ে বসে শিষ্য যে বিদ্যা গ্রহণ করে তাকে উপনিষদ বলে।
৬৩. উপনিষদ কী?
উত্তর: উপনিষদ অর্থ কারো নিকটে বসা অর্থাৎ গুরুর নিকট বসে যে বিদ্যা গ্রহণ করা হয় তার নাম উপনিষদ।
৬৪. কোন কবি 'কোকিল' কবি নামে পারিচিত?
উত্তর: কবি বিদ্যাপতি 'কোকিল' কবি নামে পারিচিত।
৬৫. 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কে রচনা করেন?
উত্তর: চণ্ডীদাস।
৬৬. চন্ডিদাস কে ছিলেন?
উত্তর: চণ্ডিদাস মধ্যযুগের ভক্তিবাদী দার্শনিক।
No comments:
Post a Comment