প্রশ্ন - ৬: শান্তিদেবের মানবতাবাদী মতের ব্যাখ্যা দাও।
অথবা, শান্তিদেবের মানবতাবাদী দর্শন সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর:
ভূমিকা: প্রগতিশীল বৌদ্ধ দার্শনিক সম্প্রদায় হিসেবে মহাযান সম্প্রদায় অত্যন্ত উদারপন্থি ও মানবতাবাদী সম্প্রদায়। এ সম্প্রদায়ের দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক শান্তিদেব (আনুমানিক ৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৮১৬ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন বুদ্ধত্বকামী মানুষের আদর্শস্বরূপ। তিনি বলেন, সথ দুঃখ, অনুরাগ বিবাগ, লাভক্ষতি সবই অবাস্তব। তিনি তাঁর 'বোধিচর্যাবতার' গ্রন্থে মহাযান বৌদ্ধ দর্শনের অনুসরণে জাগতিক সবকিছুর অসারতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে মানবতাবাদী দর্শন আলোচনা করেছেন।
শান্তিদবের মানবতাবাদী দর্শন: শান্তিদেব রচিত 'বোধিচর্যাবতার' গ্রন্থটি মানবতার সাধনায় বাঙালির মানবতাবাদী দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষ কিভাবে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে ব্যাপারে যে কয়জন মনীষী আলোচনা করেছেন তাদের মধ্যে শান্তিদেবের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জাতি হিসেবে বাঙালি কতটা উদার ও মানবতাবাদী তার প্রকৃত প্রমাণ পাওয়া যায় শান্তিদেবের 'বোধিচর্যাবতার' গ্রন্থে। এ গ্রন্থ তৎকালীন সময়ে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিল। এ গ্রন্থে মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে। এ গ্রন্থটি খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দী থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে বিভিন্ন ভাষায় অর্থাৎ তিব্বতীয়, মঙ্গোলীয় ও চীনা এ তিনটি ভাষার অনূদিত হয়। আবার আধুনিক কালে ইংরেজি ও ফারসি ভাষায় এর অনুবাদ করা হয়েছে।
শান্তিদেবের 'বোধিচর্যাবতার' দার্শনিক গ্রন্থ হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত হয়। এর মূল কারণ হলো শান্তিদেবের দর্শনের মানবিক মূল্যবোধ। মানুষের জীবনে মানবতাবাদ শান্তিদেবের দর্শনেই ফুটে উঠেছে। তিনি তাঁর বিখ্যাত 'বোধিচর্যাবতার' গ্রন্থে বলেছেন, "পৃথিবীতে অশুভ বা অন্যায় অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে আছে, যার শক্তি প্রবল। বহু প্রকার শুভ প্রচেষ্টাও অবশ্য পৃথিবীতে রয়েছে। কিন্তু ঐ ভয়ংকর অন্যায়কে জয় করার ইচ্ছা কারো নেই। তাকে জয় করতে পারে মৈত্রী। পরলোক, মোক্ষ বা নির্বাণ তো দূরের কথা, এটি না থাকলে সংসারই যে অচল হয়ে যায়।" এ উক্তিটিতে মৈত্রীর পক্ষে শান্তিদেবের সমর্থন তাঁর মানবতাবাদী মনেরই পরিচয় বহন করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, শান্তিদেব ছিলেন একজন মানবতাবাদী দার্শনিক। সমাজের মানুষের মধ্যে অন্যায়, অবিচার, ভেদাভেদ কখনো তাঁর মানবতাবাদ স্বীকার করে না। শান্তিদেব মনে করেন, সমাজের মানুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল। একজনের দুঃখে অন্যজন এগিয়ে আসবে। একজনের সুখে অন্যজন সুখী হবে। এটিই বাস্তবতা বলে শান্তিদেব মনে করেন। সুতরাং তার মানবতাবাদী দর্শনের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
No comments:
Post a Comment