প্রশ্ন - ১২: চর্যাপদের সহজিয়া দর্শন কি?
উত্তর: বাংলা সাহিত্য ও দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ ও আদি নিদর্শন হলো চর্যাপদ বা চর্যাগীতি। চর্যাপদের পদগুলোর সাহিত্য মূল্য এবং সাহিত্যের অন্তরালে গূঢ় দার্শনিক তত্ত্বের গুরুত্ব অসামান্য। মূলত বৌদ্ধ সাধন-ভজন সম্পর্কিত নানা বিষয় চর্যাগীতির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন পণ্ডিতগণ। এগুলো বিভিন্ন সময়ে রচিত হলেও একত্রে সংকলন করা হয়েছে। সহজিয়া দর্শনের উৎস হিসেবে পরিগণিত হয়।
চর্যাপদের সহজিয়া দর্শন : বৌদ্ধ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অন্যতম একটি সম্প্রদায় হলো সহজযান সম্প্রদায়, যাদের মতবাদকে সহজিয়া মতবাদ বলা হয়ে থাকে। চর্যাপদের মাধ্যমে তারা তাদের ধর্ম সাধনার নিগূঢ় পদ্ধতি ও বাণীর সাংকেতিকভাবে প্রকাশ করেছেন যা দার্শনিক তত্ত্বে ভরপুর। চর্যাপদের মূল বিষয়বস্তু হলো: সহজযান সম্প্রদায়ের ধর্মের বা সহজিয়া ধর্মের মোক্ষ | লাভের সাধন পদ্ধতির বর্ণনা; উপায় এবং তাত্ত্বিকতার আলোচনা।
বৌদ্ধ সহজযান সম্প্রদায়ের সাধকগণ নিজেদের সহজিয়া বলে। পরিচয় দেন। তাদের রচিত দর্শনই সহজিয়া দর্শন। সহজিয়াদের সাধ্য ও সাধনা অন্যান্য বৌদ্ধ সম্প্রদায় অপেক্ষা সহজ। তারা মনে করে। প্রত্যেক সত্তারই একটি সহজ স্বরূপ আছে, যা সর্বাবস্থায় সহজ থাকে। এ সহজ স্বরূপকে উপলব্ধিতে এনে মহাসুখে বা পরমানন্দে থাকাই সহজিয়াদের মূল লক্ষ্য। এটিই সহজিয়াদের মোক্ষ বা নির্বাণের স্বরূপ। তারা যে সাধন পদ্ধতির কথা চর্যায় বিবৃত করেছেন তা ছিল সহজ-সরল। যেমন- ৩২নং চর্যায় বলা হয়েছে-
"উজুরে উজু ছাড়ি মা জাহুরে বঙ্গ।
নিয়ড়ি বহি মা জাহুরে লঙ্গ."
"এ পথ সোজা, সোজা পথ ছেড়ে বাঁকা পথে যেও না; বোধি নিকটই আছে, লঙ্কায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই।"
উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, চর্যাপদের দর্শনতত্ত্ব মানেই বৌদ্ধ সহজিয়া দর্শন। বৌদ্ধ সহজিয়া সাধন সম্প্রদায়ের ধর্মসাধনার নিগূঢ় পদ্ধতি ও বাণী সাংকেতিকভাবে বহন করে চর্যাপদ রচিত। নির্বাণ লাভের সহজ সরল পন্থা বর্ণিত হয়েছে চর্যার বিভিন্ন পদে।